ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মী হোসাইন মোহাম্মদ আনোয়ারের পক্ষে বৃহস্পতিবার (২২ মে) এ নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।
নোটিশে এক সপ্তাহের মধ্য ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা দাবি জানানো হয়।
আইনজীবী রিগ্যান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আইনজীবীকে দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ায় এনসিপির ওই কর্মীকে নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, ‘আওয়ামী লীগ-এনসিপি একট্টা।’
নির্বাচনের দাবিতে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ‘হোসাইন মো. আনোয়ার একজন সচেতন নাগরিক। জুলাই আন্দোলনের সাংগঠক ও এনসিপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রাজনৈতিক কর্মী। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোশনের নির্বাচন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত সিটি করপোরেশন তালা বন্ধ করে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে করে জনহয়রানি ও ভোগান্তি বাড়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মো. শেখ ফজলে নূর তাপসের মেয়াদ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৬ মে। আর তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যায়। ঢাকা উত্তরের আতিকুল ইসলাম কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালের ১৬ মে। তিনিও গতবছরের ৫ আগস্ট পালিয়ে যায় এবং পরে গ্রেপ্তার হন। পরে ২০২৪ সালের ১৯ আগষ্ট দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কার্যকালের মেয়াদ উত্তীণ হয়েছে চলতি বছরের ১৫ মে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ২ কোটি জনগণ বাস করে। যদি নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকে তাহলে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই কষ্ট সাধ্য। এতে এ বিশাল জনগোষ্ঠির ভোগান্তির আর শেষ থাকে না। নির্বাচন না দিয়ে জনগণের দৈনন্দিন নাগরিক সেবা ব্যহৃত হচ্ছে এবং মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতেছেন যা নগর গঠনের মানবাধিকার লঙ্গনের শামিল।
অতএব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হইলো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুরের ঘটনায় ২০২৩ সালে ১৫ মার্চ রিগ্যানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান একটি মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর দোয়েল চত্বর থেকে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে। ওই বছরের ২১ মার্চ তিনি জামিন পান।
জামিনের পর অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন রিগ্যানের স্ত্রী অ্যাডভোকেট তাহেরা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রিগ্যান দেশের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে লেখালেখি করেন। যে কারণে তাকে অনেকে সরকার বিরোধী মনে করে। কিন্তু সে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।’
তিনি সেসময় আরও বলেন, ‘রিগ্যান সুপ্রিম কোর্ট বার ও ঢাকা বারের একজন নিয়মিত সদস্য। তিনি জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএম প্রোগ্রামের ব্যাংকিং ল’ অ্যান্ড কর্পোরেট পলিসি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী।’
আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হতে চাইলে এ আইনজীবী এখন এনসিপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রাজনৈতিক কর্মী হোসাইন মোহাম্মদ আনোয়ারের হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। গত ২০ মে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়েও নোটিশ পাঠান তিনি। একই দিনে এনসিপির ওই কর্মী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন।
এর আগে গত ১৪ মে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন করে সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় বরাবর আবেদন করেন সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ, কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ আবেদন করা হয়।
আরও জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সেনাসদস্য মঞ্জুরুল আলমের ওপর হামলা মামলায় গত বছরের ২৬ অক্টোবর সালাহ উদ্দিন রিগ্যান গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে মুক্তি পান।
মন্তব্য করুন