বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমার প্রশ্ন হলো যে, একটা প্রশিক্ষণ বিমান তাও ফাইটার বিমানের প্রশিক্ষণ এমন একটা জনবসতিপূর্ণ শহরে হয় কি না। আমরা জানি, এ ধরনের প্রশিক্ষণ সেখানে দেওয়া হয়, যেখানে জনগণ থাকে না। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ ঢাকা শহরের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হলো কেন?
গয়েশ্বর বলেন, স্বাভাবিকভাবে মানুষের প্রশ্ন রয়েছে বিমানবাহিনীর এ সম্পর্কে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা দরকার এবং এটার জবাব কে দেবে? এটা আপনি কি জবাব দেবেন? আমাদের দেশে বছর বছর যুদ্ধ না হোক সেনাবাহিনীর এক মহড়া হয় সেটাও আমরা জানি অনেক দূরাঞ্চলে হয়...জনাকীর্ণ এলাকায় হয় না।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে হতাহত শিক্ষার্থীদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেছে বিএনপি। এদিন সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় দলের নেতাকর্মীরা বিএনপির আয়োজিত এই বিশেষ দোয়া মাহফিলে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দলের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় ভোরে। নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেছে। এ ছাড়াও সকালে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে কার্যালয়ের সামনে আহতদের জন্য রক্তদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যুবদলসহ দলের নেতাকর্মীরা রক্ত দিচ্ছেন আহতদের জন্য।
বিশেষ দোয়া মাহফিলে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই গভীরভাবে শোকাহত। এই শোকের কোনো ভাষা নেই। এটি শুধু ক্ষতিপূরণে পূরণ হবার মতো নয়। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২৭ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু যারা বেঁচে আছে, তারাও আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কিনা, বলা কঠিন।
তিনি বলেন, এই শিশুরা চলে গেল।ওদের মা-বাবার চোখের জল কী দিয়ে মুছব? আমরা আজ সারা দেশে শোক পালন করছি। কিন্তু মাসব্যাপী, এমনকি বছরব্যাপী শোক পালন করেও কি আমরা ওদের ফিরে পাবো?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, আমরা অন্তর থেকে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায়। সেইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর যেন এই গভীর শোক সহ্য করার শক্তি দেন প্রভু।
উদাহরণ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে দেখবেন, ঢাকায় দিনের বেলায় কোথাও প্রশিক্ষণ মোটরযান চলতে দেখা যায় না। এগুলো এখন সাধারণত রাতের বেলায় হয়, তাও প্রধান সড়কে নয়- শহরের ভেতরের ছোট ছোট রাস্তায়। এটি একটি সাবধানতামূলক পদক্ষেপ। অথচ যুদ্ধবিমান চালানোর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের আগে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে একটি পূর্বপরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক- বিমানটি উড্ডয়নের উপযোগী কি না, সেটি যাচাই করা জরুরি। এখন প্রশ্ন হলো, প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগে কি সেই পরীক্ষা সঠিকভাবে করা হয়েছিল? যারা এ প্রশিক্ষণ পরিচালনা বা তদারকি করছেন, তারা কি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে বিমানটি যান্ত্রিকভাবে সম্পূর্ণ সচল ছিল? এই প্রশ্নগুলো এখন জনসাধারণের মনে উঠছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ব্যাখ্যা ও স্বচ্ছ তদন্ত প্রয়োজন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি নিজের কথা বলছি না- বলছি জনগণের অনুভূতি, তাদের প্রশ্ন ও উদ্বেগের কথা। আমার বিশ্বাস, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এসব শুনছেন। আমরা জানতে চাই, এই ঘটনায় কোথাও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল কিনা। বিমানটি আকাশে ওঠার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল কিনা এবং এটি উড্ডয়নের উপযোগী অবস্থায় ছিল কিনা।
তিনি আরও বলেন, আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য সতর্কতা প্রয়োজন। জাতির পক্ষে এই প্রশ্নগুলো তোলা জরুরি, কারণ এটাই জনগণের জিজ্ঞাসা। আমি নিজে থেকে কিছু বলছি না- এই প্রশ্নগুলো দেশের মানুষের মনের কথা।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন