২০২৪-২৫ ইউরোপিয়ান ক্লাব মৌসুমের শেষ দৃশ্য রচিত হবে শনিবার রাতে, জার্মানির মিউনিখে। আর সেই মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই ভিন্ন ধাঁচের দল—লুইস এনরিকের ‘নতুন যুগের’ পিএসজি এবং সিমোনে ইনজাগির অভিজ্ঞ যোদ্ধা ইন্টার মিলান।
তরুণ বনাম প্রবীণ—দুই দলে দুই জগতের ফাইনাল
এই ফাইনালের অন্যতম আকর্ষণ ‘তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতা’র দ্বৈরথ। পিএসজির সম্ভাব্য একাদশের গড় বয়স ২৪ বছর ৭ মাস, বিপরীতে ইন্টারের স্কোয়াডের গড় বয়স ৩০ বছর ৪ মাস! পিএসজির একমাত্র খেলোয়াড় মারকুইনিয়োস যিনি আগেও কোনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেছেন। ইন্টারের আটজন খেলোয়াড় ২০২৩ সালের ফাইনালের অভিজ্ঞতা বহন করছেন।
তবে শুধু বয়সের পার্থক্যই নয়, ম্যাচটি হতে যাচ্ছে কৌশলের যুদ্ধও—যেখানে পিএসজি খেলবে উচ্চ প্রেস, গতিময়তা ও বল দখলে আধিপত্য নিয়ে, আর ইন্টার ভরসা রাখবে গুছিয়ে খেলা, সেট-পিস এবং কার্যকর কাউন্টার অ্যাটাকে।
ডুয়েল অব দ্য গোলকিপার: সোমার বনাম ডোনারুমা
সেমিফাইনালে দুটি দলের নায়ক ছিলেন তাদের গোলরক্ষক। ইন্টারকে বার্সেলোনার বিপক্ষে নাটকীয় জয়ে নেতৃত্ব দেন ইয়ান সোমার, যিনি একাধিক বিশ্বমানের সেভ করেন। অন্যদিকে জিয়ানলুইজি ডোনারুমা আর্সেনালের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেভ করে পিএসজিকে ফাইনালে তোলেন।
দুজনেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রমাণিত এবং উভয়েরই রয়েছে পেনাল্টি শুটআউটে ‘হিরো’ হওয়ার ইতিহাস। যদি ম্যাচ টাইব্রেকারে যায়, তাহলে এই দুই তারকার দ্বৈরথ হতে পারে ফাইনালের সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায়।
লুইস এনরিকের ‘দ্বিতীয় ট্রেবল’ মিশন
২০১৫ সালে বার্সেলোনার হয়ে মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারকে নিয়ে ট্রেবল জেতা এনরিক এবার নিজের তৈরি করা এক দলকে নিয়ে ইউরোপ দখল করতে চাচ্ছেন। মেসি-নেইমার-ভেরাত্তিদের বিদায় দিয়ে তিনি দলে এনেছেন ডেসিরে দুয়ে, খভিচা, জোয়াও নেভেস ও উইলিয়ান পাচো—যারা পুরো মৌসুমে পিএসজির আধিপত্য গড়ে তুলেছে।
এবার এনরিকের লক্ষ্য, গার্দিওলার মতো দুই ক্লাবের হয়ে দুটি ট্রেবল জয় করা, যা তাকে আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা কোচ হিসেবে প্রমাণ করতে পারে।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
দুজন দুর্দান্ত ফুলব্যাক: হাকিমি বনাম ডুমফ্রিস
হাকিমি একসময় ছিলেন রিয়ালের সম্পদ, এখন পিএসজির আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যদিকে, ডেনজেল ডুমফ্রিস এই মৌসুমে ইন্টারের হয়ে সেমিফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে গোল ও অ্যাসিস্টে আলো ছড়িয়েছেন। দুজনের খেলার ধরন আলাদা হলেও লক্ষ্য একটাই—প্রভাব ফেলা ম্যাচে।
‘মিউনিখের কুসংস্কার’—প্রথমবারের জয়ধ্বনি?
মিউনিখে এখন পর্যন্ত চারটি ইউরোপিয়ান ফাইনাল হয়েছে, এবং প্রতিবারই জয়ী হয়েছে কোনো ক্লাব যারা প্রথমবার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
এবারের ফাইনালেও ইন্টার তিনবারের চ্যাম্পিয়ন, আর পিএসজি খুঁজছে তাদের প্রথম ইউসিএল ট্রফি। ইতিহাস কি আবার প্যারিসিয়ানদের পক্ষেই যাবে?
এটি শুধুই একটি ফাইনাল নয়, বরং একটি যুগান্তকারী লড়াই। একদিকে পিএসজির তরুণ আগ্রাসন, অন্যদিকে ইন্টারের স্থিতধী অভিজ্ঞতা। মিউনিখের আলোতে শেষ হাসি কে হাসবে? লুইস এনরিকের আত্মনির্মিত স্বপ্ন? নাকি ইনজাগির পরিপক্ব কৌশল?
৩১ মে, মিউনিখ। বিশ্ব অপেক্ষায়।
মন্তব্য করুন