সরকারের বিরুদ্ধে আবারও ফুঁসে উঠছে এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন। দেশটিতে আজ আবারও রাজপথে নামছে বাসিন্দারা। সরকারের দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল হতে যাচ্ছে দেশটি।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেট্রো ম্যানিলায় রোববার হাজার হাজার মানুষ এক বিশাল বিক্ষোভে অংশ নেবে। সরকারি অর্থায়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে গোটা ফিলিপাইনে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রিলিয়ন পেসো মার্চ’, যার মাধ্যমে ২০২৩ সালে জলবায়ু সম্পর্কিত প্রকল্প থেকে প্রায় ১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় এক ট্রিলিয়ন ফিলিপাইন পেসো) আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ধরেছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ সেপ্টেম্বরের এই দিনটির রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। ১৯৭২ সালের এই দিনেই তৎকালীন স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মারকোস ফিলিপাইনে মার্শাল ল’ জারি করেছিলেন, যা পরবর্তীতে গণআন্দোলনের মাধ্যমে তার দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটায়। ১৯৮৯ সালে তিনি ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ।
বর্তমানে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ফার্দিনান্দ ‘বংবং’ মারকোস জুনিয়– সেই স্বৈরশাসকের পুত্র। তিনি জনগণের বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আপনারা কি তাদের দোষ দেন রাস্তায় নামার জন্য? আমি যদি প্রেসিডেন্ট না হতাম, আমি হয়তো তারাও সঙ্গে থাকতাম। সবাই ক্ষুব্ধ, আমিও ক্ষুব্ধ। আমাদের সবারই ক্ষুব্ধ হওয়া উচিত, কারণ যা ঘটছে তা সঠিক নয়।
সংবাদমাধ্যম গামানেটওয়ার্ক জানিয়েছে, রোববার রাজধানী ম্যানিলায় দুটি বড় বিক্ষোভ কর্মসূচি হতে যাচ্ছে। সকাল ৯টায় রিজাল পার্ক থেকে শুরু হবে প্রথম কর্মসূচি, যার শিরোনাম ‘বন্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ : দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন’। এতে অংশ নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, নাগরিক সংগঠন ও বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ।
এরপর দুপুর ২টায় ইডিএসএ পিপল পাওয়ার মনুমেন্টে শুরু হবে দ্বিতীয় বিশাল সমাবেশ। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। নেতৃত্ব দেবেন খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মীয় নেতারা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে নাগরিক সমাজ, তরুণ সংগঠন ও সাধারণ মানুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অসংখ্য সিভিল সোসাইটি, চার্চ সংগঠন ও ছাত্রসমাজ এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তরুণদের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি ঢেউ তৈরি হয়েছে – সম্প্রতি নেপালে জেনারেশন জেড-এর নেতৃত্বে সরকার পতন, ইন্দোনেশিয়ায় এমপিদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা বাতিল, এবং তিমুর-লেস্টেতে এমপিদের এসইউভি গাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল– এসব ঘটনার সঙ্গে এ বিক্ষোভের মিল রয়েছে।
ফিলিপাইনে সম্প্রতি ‘ঘোস্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ বা কাগজে-কলমে থাকা কিন্তু বাস্তবে না হওয়া প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ চরমে ওঠে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্টের এক আত্মীয় এবং হাউজ স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজ পদত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলোর চারপাশে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তা শুধু আমার নয়, গোটা প্রতিষ্ঠানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমি সম্পূর্ণ আন্তরিকতা ও পরিষ্কার বিবেক নিয়ে পদত্যাগ করছি, যাতে স্বাধীন কমিশন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালাতে পারে।
একটি নির্মাণ কোম্পানি সম্প্রতি প্রায় ৩০ জন সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলে। এরপরেই প্রেসিডেন্ট মারকোস সাবেক সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি আন্দ্রেস রেয়েসের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এ কমিশন গত এক দশকের বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলো তদন্ত করবে।
মন্তব্য করুন