যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভিসানীতির ধাক্কায় বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক ভারতীয়দের ভিসা অনুমোদনের হার নাটকীয়ভাবে ৪৪.৫ শতাংশ কমে গেছে। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মোট ভিসা ইস্যু ১৯.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে।
তথ্য বলছে, শুধু আগস্ট মাসেই যুক্তরাষ্ট্র ৮৬ হাজার ৬৪৭ জন চীনা শিক্ষার্থীকে ভিসা দিয়েছে, যা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বিশ্লেষকদের ধারণা, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় ঘনিষ্ঠ করতে ভারতীয়দের ভিসা সীমিত করে চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বাড়াচ্ছে।
গাজা ইস্যুতে বিক্ষোভকারীদের ভিসা বাতিল
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের জেরে হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয় শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভারতীয় উপস্থিতি আরও কমিয়ে দিতে পারে। কারণ দেশটির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভারতীয়রাই ছিল অন্যতম বড় বিদেশি শিক্ষার্থী গোষ্ঠী—চীনাদের পরেই তাদের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
কনস্যুলেট সাক্ষাৎকার ও এইচ-১বি ফি বৃদ্ধি : নতুন বাধা
নতুন প্রশাসনের আরেক সিদ্ধান্ত ভারতীয়দের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। এখন থেকে মার্কিন ভিসার জন্য নিজ দেশের কনস্যুলেটে সরাসরি সাক্ষাৎকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা আগে তুলনামূলক সহজ ছিল। ফলে সময় ও ব্যয়—দুই-ই বেড়ে গেছে আবেদনকারীদের জন্য।
একইসঙ্গে, এইচ-১বি ভিসার ফি ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ পাওয়া ভারতীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। প্রযুক্তি খাতে ভারতীয়রাই এই ভিসার সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন।
‘আমেরিকান ড্রিম’ এখন অনিশ্চিত
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতীয় শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের গন্তব্য—উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়ার এক বড় সুযোগ হিসেবে। কিন্তু সাম্প্রতিক কঠোর নীতি ও প্রশাসনিক জটিলতা সেই ‘আমেরিকান ড্রিম’-কে এক অনিশ্চিত দুঃস্বপ্নে পরিণত করছে।
শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বিকল্প হিসেবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের দিকে ঝুঁকতে পারেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবাজারে বড় প্রভাব ফেলবে।
মন্তব্য করুন