কক্সবাজারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে চারটি পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে স্কুলছাত্রীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিন সন্ধ্যায় প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকত পাড়া এলাকায় পাহাড়ের মাটিচাপা পড়া মীম নামে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মিম সৈকত পাড়ার বাসিন্দা মো. সেলিমের মেয়ে ও সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা দোলন আচার্য কালবেলাকে বলেন, পাহাড় ধসের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে লামিয়া নামের একজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মিম নামের আরেকজনকে প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর মৃত উদ্ধার করা হয়েছে।
উত্তর কলাতলী আদর্শ সমাজ কমিটির সভাপতি নুরুল হুদা বলেন, পাহাড় ধসের পর স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। যদিও পাহাড় ধসের পরপরই স্থানীয়রা মাটিচাপা পড়াদের উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে যোগ দেয়। প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর মিমকে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরিপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে লায়লা বেগম নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহত লায়লা বেগম স্থানীয় বজল আহমদের স্ত্রী। এ সময় মোহাম্মদ জুনায়েদ নামে দুই বছরের এক শিশুকে আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত লায়লার মেয়ে ইয়াছমিন আক্তার বলেন, আমার মা-ভাইকে নিয়ে দুপুরে ভাত খাচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ পাহাড় এসে রান্না ঘরে পড়ে। স্থানীয়দের সহযোগীতায় আমার মা এবং ভাইকে উদ্ধার করা গেলেও পরে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমার ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ছাড়া সকাল ৭টার দিকে পাহাড় ধসের পৃথক ঘটনায় কক্সবাজার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পাহাড় ধসে দুজনের মৃত্যু হয়।
তাদের মধ্যে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পল্যান কাটা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা বেগম এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকার সাইফুলের ছেলে মো. হাসান।
নিহত জমিলার স্বামী করিম বলেন, সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় আচমকা পাহাড়ের মাটি বসতঘরে পড়লে চাপা পড়ে জমিলা। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শিশু হাসানের পরিবার জানায়, পাহাড় ধসে ঘরের মাটির দেওয়ালে পড়লে মাটির দেওয়ালসহ আসবাবপত্র পড়ে নিহত শিশু হাসানের গায়ে। ঘটনাস্থল থেকে তাকে মৃত উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম তারিকুল আলম কালবেলাকে বলেন, কক্সবাজার পৌরসভা ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে। তাদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের পাহাড়ে বসবাসকারীদের মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। এ কারণে মৃত্যুর মতো এমন ঘটনা ঘটছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে তারা নিরাপদে আছে।
মন্তব্য করুন