কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কাঁঠালের জমজমাট বেচাকেনা, দাম নিয়ে খুশি বিক্রেতারা

বিক্রির জন্য বাজারে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঁঠাল। ছবি : কালবেলা
বিক্রির জন্য বাজারে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঁঠাল। ছবি : কালবেলা

কাঁঠালের রাজধানী খ্যাত গাজীপুরে এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। কাঁঠালের দরদাম নিয়ে খুশি বাগান মালিক ও বিক্রেতারা। বিশেষ করে কাঁঠালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার জৈনা বাজারে চলছে জমজমাট কাঁঠালের বেচাকেনা।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকাররা এখানে সুলভ দামে কাঁঠাল কিনে নিচ্ছেন। তবে ক্রেতারা বলছেন, পরিবহন খরচ, শ্রমিক ও ইজারাদারদের টাকা দেওয়ার পর খুচরা পর্যায়ে খুব কম লাভ হয় তাদের। আর কাঁঠাল বাগান মালিক ও স্থানীয়দের দাবি, সরকারি উদ্যোগে কাঁঠাল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করা হলে এ অঞ্চলে কাঁঠাল চাষে আগ্রহী হবেন সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঁঠালের পাইকারি বাজার জৈনাবাজার। প্রতি বছরের মতো এবারো বাজার বসেছে। এখানকার স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় রসাল কাঁঠাল পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। সকাল থেকে রাত অবধি পাইকার, খুচরা বিক্রেতা, কাঁঠাল পরিবহন নিয়ে জমজমাট এই বাজার।

এ বাজারে অন্তত ৩০-৪০টি পাইকারি মোকামের মাধ্যমে ছোট-বড় কাঠাল হাত বদল হয় পাইকারদের কাছে। সাধারণত প্রতিটি কাঁঠাল ৫০ টাকা থেকে শুরু করে দুই/ আড়াইশ টাকায় বিক্রি হয়।

বিক্রেতারা বলছেন, এবার কাঁঠালের বাজার দর ভালো, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকাররা জৈনা বাজার থেকে কাঁঠাল কিনছেন। প্রতিদিন বেচা-বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

জৈনা বাজারের আড়তদার ইসলাম উদ্দীন বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে এখানে আড়তদারি করি। নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফেনী, চাঁদপুর, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁঠালের জন্য পাইকাররা আসেন। কম দামে ভালো মানের কাঁঠাল পাওয়া যায় এই ঐতিহ্যবাহী হাটে।

জৈনা বাজারের আড়তদার সোহেল রানা বলেন, সিলেটে এবারের বন্যার কারণে কাঁঠাল বেচাকেনাও কম। তবে লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখানে কাঁঠাল কিনতে আসেন। প্রতিদিন জৈনা বাজার আড়ত থেকে অন্তত ২০-৩০ কাঁঠালের গাড়ি পা‌ইকাররা নিয়ে যান।

এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন হাটেও এখান থেকে কাঁঠাল যায়। তবে উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকলে বাগান মালিকরা ন্যায্য দাম পেতেন এবং ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হতেন।

বাগান মালিক তোতা মিয়া বলেন, কাঁঠাল গাছের খুব একটা যত্ন করতে হয় না। এবার বাগানে ৭০ থেকে ৮০টি গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। গত ১৫ দিনে ছোট-বড় ৫০০-৭০০ কাঁঠাল বিক্রি করেছি। তবে বৃষ্টিপাত ও এক সঙ্গে অনেক কাঁঠাল পাকলে বিক্রি করতে একটু সমস্যা হয়। পেঁকে পচে যাওয়ার ভয়ে অনেক সময় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই।

জৈনা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সানি বলেন, জৈনা বাজারের কাঁঠাল অনেক বিখ্যাত। বাগানগুলোতে প্রচুর কাঁঠাল রয়েছে। তবে অনেক কাঁঠাল এক সঙ্গে পেঁকে গেলে সংরক্ষণ করা যায় না। অনেক কাঁঠাল পচে যায়। এজন্য কাঁঠাল সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা নিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, জৈনা বাজারের কাঁঠাল খুবই ভালো মানের। অনেক সুস্বাদু তাই, এর চাহিদা অনেক বেশি। আমি এখান থেকে প্রতিদিন দুই-তিন গাড়ি কাঁঠাল নিয়ে বিক্রি করি। তবে কাঁঠালপ্রতি ইজারাদারদের ৩-৪ টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া মৈয়ালি, লেবার খরচ ও পরিবহন খরচ বাদ দিলে আমাদের লাভের পরিমাণ কম থাকে। তারপরও আমরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরের মাটি ও আবহাওয়া কাঁঠাল চাষের উপযোগী। জেলায় এবার ৯ হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমিতে এবার কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। এক সঙ্গে অনেক কাঁঠাল পেকে যাওয়ায় অনেক সময় চাষিরা ন্যায্য মূল থেকে বঞ্চিত হন। কাঁঠাল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে লাভবান হবেন কৃষকরা।

তিনি বলেন, গাজীপুরে এবার ৫ উপজেলায় কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারজাতকরণের সুযোগ পেলে কাঁঠাল আবাদ আরও বাড়বে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল জমিয়ত

মহররমে বিদআত ও ভ্রান্ত রীতি : যা করণীয়

যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের পদত্যাগ

সরকারি চাকরিতে বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা

দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে আজ 

০১ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে

মঙ্গলবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে তালা দিলেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা

১০

চাকসু ভবনকে ‘ভাতের হোটেল’ ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের

১১

৭ দিন ধরে খোঁজ মিলছে না এসএসসি ফলপ্রার্থী রিয়ামনির

১২

আট মামলার আসামিকে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

১৩

রাসিকের ৮০৬ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

১৪

চাল না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা

১৫

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে : আব্দুল হালিম

১৬

গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ

১৭

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

১৮

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, কেয়ারটেকারকে ঘিরে সন্দেহ

১৯

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

২০
X