লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হওয়া আফনান পাটওয়ারী ও সাব্বির আহমেদের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের হুমকিতে পড়ে এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। বাসায় তালা ঝুলিয়ে অন্যস্থানে আশ্রিত থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে এসব পরিবার সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। এদিকে নিহত আফনান ও সাব্বিরের সহপাঠীরা তাদের কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না, তারাও বিচার দাবি করেন।
সরেজমিন শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার আরমান মিঝি মসজিদবাড়ি আফনানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বসত ঘরে ঝুলছে তালা। আশপাশের লোকজন বলছেন, তারা বাড়িতে নেই, ভয়ে বাড়ি ছাড়া আফনানের মা ও একমাত্র বোন। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় (আন্দোলনরত অন্যদের সহযোগিতায়) প্রায় ১ ঘণ্টা পর আশ্রিত গোপন ঠিকানা থেকে বাড়িতে আসেন তারা। এ সময় সহপাঠীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা ও বোন।
সে দিনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে সহপাঠীরা বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে বই খাতার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যান আফনান। হঠাৎ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় পড়েন তারা। সহপাঠী এক শিক্ষার্থীকে (ছাত্রী) বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় সে। এ সময় মাদাম ব্রিজের ওপর লুটিয়ে পড়ে। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখান থেকে হাসপাতাল ও বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত আফনান লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে (চলমান) এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
এদিকে আন্দোলনে নিহত আরেকজন সাব্বির হোসেন রাসেল। শহরের মনির উদ্দিন পাটোয়ারী নামে নানার বাড়িতে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এইচএসসি পাস করে দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন। ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাব্বির। তার নানার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এখনো থামেনি পরিবারের আহাজারি। চলছে মাতম। ১৪ মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে তার স্ত্রী তর্ণা আক্তার, বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবার অনেকটাই বাকরুদ্ধ অবস্থায়।
স্ত্রী তন্না বলেন, আমার স্বামী পৃথিবীতে নেই ভাবতেই কষ্ট লাগে, তার শরীরে ৩২টি গুলি করা হয়েছে। যারা গুলি করেছে তাদের বিচার চাই। শিশুটি নিয়ে বাঁচতে কিছু করে জীবিকা নির্বাহে সরকারি সহায়তা চান তন্না।
একই দাবি জানান তার বাবা আমীর হোসেন, মা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী আরমান, বায়েজীদসহ অন্যান্য সৈনিকরা । নিহতদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান তারা। এ সময় জেলার ৪ শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও করেন এসব শিক্ষার্থী।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান কালবেলাকে বলেন, নিহতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত করেছি তাদের। যে কোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রশাসনকে ও সেনাবাহিনীকে জানানোর জন্য বলে দিয়েছি।
মন্তব্য করুন