গোমতী ও সালদা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এতে এ উপজেলার ৯৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। দুই সপ্তাহের তাণ্ডব শেষে বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। বিভিন্ন সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। অনেক এলাকায় বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ ফিরেছে নিজ নিজ বাড়িঘরে।
তবে বন্যার ভয়াবহতার রেশ না কাটতেই বন্যাকবলিত ব্রাহ্মণপাড়ায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। এতে বানভাসিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, সর্দি ও জ্বরসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
চিকিৎসকরা বলছেন, বন্যাপরবর্তী সময়ে বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দেয়, এটা দুর্যোগেরই অংশ। এ সময়টায় অবশ্যই বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে। ব্যবহারিক জিনিসপত্র ও কাপড়চোপড় বন্যার পানিতে না ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যতটা সম্ভব বন্যার পানি এড়িয়ে চলা। এতে পানিবাহিত নানা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে রোগীর চাপ। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও নারীদের সংখ্যাই বেশি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন প্রায় ৩০০ রোগী। সকাল থেকে রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৫৬ জন রোগী।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে বেড়েছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় বেড়েছে। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে সাধারণ রোগের চেয়ে পানিবাহিত রোগ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। এদের মধ্যে কেউ কেউ এসেছেন ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে, আবার কেউ কেউ এসেছেন চর্মরোগ নিয়ে। কারো কারো দেখা দিয়েছে জ্বর। চিকিৎসাপত্রের পাশাপাশি আগত রোগীদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে জরুরি ওষুধ। রোগীদের দেওয়া হচ্ছে নানা পরামর্শও।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন খাদিজা আক্তার (৪৫)। তিনি ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে এসে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। খাদিজা আক্তারের স্বজনরা কালবেলাকে বলেন, শনিবার বিকেল থেকে পেট ব্যথা শুরু হয় তার। পরে রাতে শুরু হয় বমি ও পাতলাপায়খানা। সকালে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে স্বজনরা তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তখন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু হুজাইফা আক্তারের মা শারমিন আক্তার বলেন, হুজাইফা রোববার রাত থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা করছে। রাতেই বাড়ির কাছের বাজারের দোকান থেকে ওষুধ এনে খাইয়েছি। তেমন কোনো উন্নতি না দেখে হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া দেলোয়ারা বেগম বলেন, গত দুতিন দিন ধরে ছেলের পায়ে ও হাতে ছোট ছোট দাগ পড়েছে। এগুলোর চুলকানোর জন্য ছেলেটা কান্নাকাটি করছে। নখ দিয়ে চুলকিয়ে রক্ত বের করে ফেলছে। স্থানীয় দোকানের ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো উপকার না পেয়ে এখানে এসে ডাক্তার দেখিয়েছি। চিকিৎসক, বলেছেন বন্যার পানির কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে বলেন, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, কাশি, চর্মরোগ ও আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত। দিন দিন রোগী আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসাপত্রের সঙ্গে জরুরি ওষুধও বিনামূল্যে দিচ্ছি। পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করণীয় বিষয়ে নানা পরামর্শও দিচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের মেডিকেল টিম চিকিৎসা, পরামর্শ ও ওষুধ সরবরাহে নিয়োজিত আছে। আমাদের ওষুধের কোনো সংকট নেই। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ সচেতনতা অবলম্বন করলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমে যাবে।
মন্তব্য করুন