মিজানুর রহমান, ফেনী
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফেনীতে এবার নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ

ফেনীর সোনাগাজীতে নদীভাঙন। ছবি : কালবেলা
ফেনীর সোনাগাজীতে নদীভাঙন। ছবি : কালবেলা

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার রেশ না কাটতেই এবার নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে এ জনপদের বাসিন্দারা। জেলার ছয়টি উপজেলায় নদীভাঙনে একের পর এক জনপদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে বাসিন্দারা।

তাই স্থানীয়রা দাবি তুলছে, দ্রুত খাল এবং নদীগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা না হলে অচিরেই নদীতে তলিয়ে যাবে আরও বিস্তীর্ণ জনপদ। এ ছাড়া নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অবস্থিত মুছাপুর রেগুলেটর দ্রুত নির্মাণ না হলে জোয়ার-ভাটার কারণে এ অঞ্চলে আরও ভাঙনের সৃষ্টি হবে। তাই মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণের দাবি জানায় স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা যায়, জেলার ছোট ফেনী নদীর ক্রমবর্ধমান ভাঙনের মুখে ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। এসব এলাকায় নদীভাঙনের ফলে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। সোনাগাজী উপজেলার কাজীরহাটের আওরারখিল এলাকার শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে এরই মধ্যে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ভাঙনে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরগোপালগাঁও গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তাদের বসতভিটাসহ সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। একই উপজেলার তালতলী বাজার মিয়াজিরঘাট সংলগ্ন এলাকায় অনেক পরিবার নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ও চরদরবেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এরই মধ্যে নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পুরো সোনাগাজী উপজেলা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া জেলার দাগনভূঞা উপজেলার সদর ইউনিয়নের করিমপুর ও মাতুভূঞা ইউনিয়নের আশ্রাফপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবার নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অন্যদিকে, ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের বক্সবাজার সংলগ্ন নদীতে নদীর কূল ঘেঁষে বসবাস করা ২১টি পরিবার এরই মধ্যে নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।

এর মধ্যে শতবর্ষী বক্সবাজার ঈদগাঁও ভাঙনের মুখে রয়েছে, যে কোনো সময় তা-ও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। এ ছাড়া ফেনী সদরের ফরহাদনগরের কালীদাস পাহালিয়া নদীতে ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের কারণে চরকালীদাস ও জগৎজীবনপুর এলাকার বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদীভাঙনে ফরহাদনগর এলাকার বেশ কিছু এলাকা বিলীন হয়ে গেছে, যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কালীদাস পাহালিয়া নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এতে নদীভাঙনের ফলে বহু বসতবাড়ি, ফসলি জমি এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বালিগাঁও ইউনিয়নের বক্সবাজারের বাসিন্দা নুর হোসেন খান জানান, আমার এলাকায় এ পর্যন্ত নদীভাঙনে প্রায় ২১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশের ঈদগাটি খুব মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঈদগাটি এবং এ জনপদের বাসিন্দাদের রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা না নিলে আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে বলে তিনি জানান। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা এরই মধ্যে মধ্যে এলাকা পরিদর্শনে গেছেন। তবে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকাবাসী খুব আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে। এজন্য তিনি মুছাপুর রেগুলেটর দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান।

সোনাগাজীর চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরগোপালগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন জানান, নদীভাঙন থেকে আমার বসতভিটা রক্ষার জন্য বাঁশ ও গাছের ডালপালা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নদীর সঙ্গে লড়াই করে টিকবে কি না, জানি না। কারণ এরই মধ্যে সামছুল হক, ওবায়দুল হক, সৈয়দ আহমদ, ডা. শাহ আলম, মুরশিদ আলম, জিয়াউল হক, আবদুর রৌপ, নুরুল আমিন, জাফর উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন ও আবুল হোসেনের ঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। এত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও দায়িত্বশীলদের কোনো দেখা মেলেনি। তাই নিজের ভাইকে নিয়ে ভিটেমাটি রক্ষার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

ফুলগাজী উপজেলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, মুহুরী নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। দ্রুত নদী ড্রেজিং করে পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা না গেলে নদীর দুই কূল ভেসে অল্প বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে পানি জনপদে চলে আসবে। এজন্য আমরা আবারও বন্যায় শিকার হব। তাই ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া এলাকার জনগণকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে মুহুরী নদীর তলদেশ ড্রেজিং করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। তিনি এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

ফেনী পৌর এলাকার বাসিন্দা যোবায়ের আহমদ কালবেলাকে জানান, পৌরসভার বিভিন্ন খাল ও নালা পরিষ্কার না করার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য খাল এবং নালাগুলো পরিষ্কার করে পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা না গেলে ফেনী পৌর এলাকা আবার পানিতে তলিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন কালবেলাকে জানান, নদীভাঙন রোধে বি-স্ট্রং নামে একটি প্রজেক্টের টেন্ডার প্রসেসিং চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া আমরা ভাঙন রোধে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, নদীভাঙন ফেনীর অন্যতম একটি সমস্যা। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্ট দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে রাজধানীতে মতবিনিময় সভা 

কোনো অবস্থাতে যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না হয় : সালাহউদ্দিন

অভ্যুত্থানে শহীদ বাঙলা কলেজের দুই ছাত্রের স্মরণে পদযাত্রা 

জুলাই অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য: ড. মোর্শেদ

দেশের সংকট মোকাবেলা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই: ডা. হারুন

নতুন ব্যবস্থাপনায় গ্রাহক-আমানত বেড়েছে ইউসিবিএলের

৪০টির বেশি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে দেশবন্ধু গ্রুপ

মাগুরায় ফের শিশু ধর্ষণের শিকার, পরিবারের পাশে তারেক রহমান

পদ্মার ভাঙন রোধের দাবিতে গণসমাবেশ

ফেনীতে এবার নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ

১০

ব্যস্ততা বেড়েছে নৌকা তৈরির কারিগরদের

১১

রাজধানীর পল্লবীতে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

১২

‘এখন আমি অনেকটাই সুস্থ’

১৩

স্টেডিয়ামে খাবার-পানি নেওয়ার অনুমতি, মানতে হবে ১২টি শর্ত

১৪

আবাসিক হোটেলে অভিযানে গিয়ে অবরুদ্ধ ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা

১৫

বাংলাদেশে নতুন করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে : নাহিদ

১৬

বৃহস্পতিবারের মধ্যে লঘুচাপের শঙ্কা, ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

১৭

ভৈরবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

১৮

প্রেমের গুঞ্জনে সৃজিত বললেন ‘রিল্যাক্স’

১৯

নির্বাচনের মাঠে এসে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন : জুয়েল

২০
X