ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের শিমরাইল গ্রামে শতবর্ষ ধরে বিরাজ করছে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে মসজিদ ও মন্দির। প্রায় ১০০ বছর ধরে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে চলছে নামাজ ও পূজা। কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াই মিলেমিশে বসবাস করছে হিন্দু-মুসলিমরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিমরাইল মধ্যপাড়ার সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশ্রমের পাশেই রয়েছে মসজিদ। পূজার সময় ঢাক-ঢোলের বাদ্য বাজলেও আজান শুরু হলে থেমে যায় সব শব্দ। নামাজ শেষে আবার ঢোলের আওয়াজে মুখর হয়ে ওঠে মণ্ডপ। একই আঙিনায় দুই ধর্মের ভিন্ন উপাসনা হলেও নেই কোনো বিরূপতা, বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানই এখানে মূল ভিত্তি।
স্থানীয় মুসল্লি তাজুল ইসলাম ও নাজির আহমেদ জানান, মসজিদটির বয়স প্রায় ১০০ বছর, মন্দিরটির প্রায় ৯০ বছর। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি। সময়মতো নামাজ পড়ি, তারা পূজা করে— এতে কারও কোনো সমস্যা নেই।
স্থানীয় তরুণ তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সুশৃঙ্খলভাবে ধর্ম পালন করি। আজানের সময় তারা বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখে, আর আমরা নামাজ শেষে তাদের পূজায় নিরাপত্তায় সহযোগিতা করি।
শিমরাইল মধ্যপাড়া সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমের সভাপতি সুমন রায় বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। আমরা মন্দিরের পাশে মসজিদের সঙ্গে মিলেমিশে আছি। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখি।
স্থানীয় তপন দেবনাথ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে পূজা হয়ে আসছে। আগে কিছুটা ভয় থাকলেও এখন শান্তিপূর্ণভাবে পূজা করি। আমাদের পুরোনো মন্দিরের উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পুরোহিত সম্পদ চক্রবর্তী বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হলো আমাদের মসজিদ ও মন্দির। আজান চলাকালে আমরা নিজেরাই বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখি।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছামিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দিরে মুসলমানরা নামাজ আদায় করছেন, হিন্দুরা পূজা করছেন। বিগত বছরের মতো এ বছরও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন