

অসামাজিক কার্যকলাপ ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে প্রিয়া বিউটি কেয়ার মেকওভার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে পার্লারে সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত নারীরা সমস্যা সমাধানের বদলে দুর্ভোগে পড়ছেন।
মানহীন পণ্যের ব্যবহার ও অদক্ষ কারিগরের কারণে প্রতারণরার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ২০২১ সালে ফাহমিদা খুশবু প্রিয়া নামে এক নারী নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে যাত্রা শুরু করেন প্রিয়া বিউটি কেয়ার মেকওভার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অফারের নামে প্রতিনিয়ত চটকদার বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন তিনি। পাশাপাশি নিজের পার্লারের রিভিউ প্রতিনিয়ত করতেন।
নারীরা কিছুটা ছাড়ের আশায় পার্লারে ভিড় করতে থাকে। কিন্তু তার কথায় আর কাজে কোনো মিল পাননি বলে অভিযোগ সেবা প্রত্যাশীদের। ভুক্তভোগীরা জানায়, পার্লারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা সার্টিফাইড কোনো বিউটিশিয়ান নেই। প্রসাধনী সামগ্রীর প্রচারণায় ‘ইমপোর্টেড’ বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে নিম্নমানের বা স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
মারিয়া নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, পার্লারের সার্ভিস খুব খারাপ। তাদের পার্লারের সার্ভিস নিয়ে আমার মুখে ব্রন হয়েছে। তারা একজনের টিস্যু আরেকজনের ফেসে ব্যবহার করে। এ ছাড়া মানহীন পণ্য ব্যবহারের কারণে আমি সমস্যা পড়েছি। পার্লারে নিজের সৌন্দয চর্চা করতে গিয়ে এখন ভোগান্তিতে পড়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, তাদের ফেসবুকে অফার দেখে আইব্রো ট্যাটু করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখিয়েছে এক ডিজাইন করেছে আরেক ডিজাইন, যা দেখতে খুব খারাপ লাগছিল। আবার এটা রিমুভ করতেও টাকা নিয়েছে।
প্রতারণার এসব অভিযোগ এনে নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাজেদা আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী নারী। তিনি পার্লারটিতে অ্যাস্টেসিক সেবা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। যার ফলে তার মুখে ব্রণ ও চুল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। এজন্য তিনি মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে দাবি করে এর বিচার চেয়েছেন।
এ ছাড়া পার্লারের কর্মীদের মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করেন, ন্যায্য বেতন দেওয়া হয় না, দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে নানা অসদাচরণ করা হয় ও চুক্তির নামে নির্যাতন করা হয়। এমনকি কর্মরতদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোসহ গোপনে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ আছে। পার্লাারের আড়ালে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানোরও অভিযোগ করেছেন এ সাবেক কর্মীরা।
অভিযুক্ত প্রিয়া বিউটি কেয়ার মেকওভার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার এর সত্বাধিকারী ফাহমিদা খুশবু প্রিয়া বলেন, আমার পার্লারে কোনো এস্থেটিক ট্রিটমেন্ট হয় না। এ ছাড়া এ পার্লারে যারা কাজ করে তাদের কোনো সার্টিফিকেট নেই, কারণ আমি নিজেই শিখিয়ে সার্টিফিকেট দিই।
তিনি বলেন, পার্লারে প্রতি মাসে একশজনকে যদি আমি সার্ভিস দিই, তার মধ্যে একশজনের চুল শতভাগ ভালো থাকবে, এমন না। সমস্যা হবেই, আর এটাই স্বাভাবিক। আমার পার্লারে আমি ভদ্র মেয়েদেরই রাখি, অভদ্র মেয়েদের রাখি না। তাই আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।
তবে, অভিযুক্ত ফাহমিদা খুশবু প্রিয়া এতসব অভিযোগ অস্বীকার করার পরও তার ফেসবুক পেইজ ঘুরে দেখা গেছে ‘এস্থেটিক ট্রিটমেন্ট নিয়ে নিয়মিত চটকধার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। ঐসব বিজ্ঞাপনে এস্থেটিক ট্রিটমেন্টে বিশেষ ছাড়সহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তা পেজে আপলোড ও বুস্ট করছেন।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, অভিযোগ এখনো আমার নজরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরে জানাতে পারব।
মন্তব্য করুন