নরসিংদীর বেলাব উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনের চার বছর পার হলেও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কমপ্লেক্সে ভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নেই পদচারণা। ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নান্দনিক ভবনটি ক্রমেই জৌলুশ হারাচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভবনটিতে যে দোকান ঘরগুলো করা হয়েছে, সেগুলো ও বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কোনো কমিটি না থাকায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আয়শা জান্নাত তাহেরা।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,বেলাব উপজেলা নামাপাড়া হরিজন পল্লীর পাশে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এ মুক্তিযোদ্ধা ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নির্মাণ কাজ শেষ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উপজেলা কার্যালয়ে হস্তান্তর করে।
উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এ ভবনটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১০ শতক জমির ওপর নির্মিত চারতলা ভিত্তির তিন তলা কমপ্লেক্স ভবনের সম্মুখে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, নিচতলা ও দোতলা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দোকানঘর। তিনতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস, মিলনায়তন, টয়লেট, লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক নকশায় নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের বাইরে ময়লা আর দুর্গন্ধ। দেখা ভবনটি দেখার জন্য নেই কোনো তত্ত্ববধায়ক। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোকান ঘরগুলো বরাদ্দ হলে ভবনটিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আ. খালেক মাস্টার বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। নির্বাচিত কমিটি থাকলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি বিষয়গুলো দেখভাল করছেন।
সাবেক উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছি। ওনি যদি অফিস খুলে দেয় তাহলে আমরা যাব।
যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক উপজেলা কমান্ডার ও বেলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সাফি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উপহার। তবে বাজার থেকে একটু দূরে হওয়ায় মানুষে রুম ভাড়া নিতে আগ্রহ নেই।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অনিক রায় বলেন,আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়ার জন্য যত প্রক্রিয়া আছে সব অবলম্বন করেছি। কিছুদিন পূর্বে দুইটি রুম বরাদ্দ দিয়েছি। বাকি রুমগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, রুম বরাদ্দ দেওয়ার জন্য যত প্রক্রিয়া আছে সব অবলম্বন করা হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি চালুর জন্য। কিন্তু যাদের জন্য করা তারা কেউ কমপ্লেক্সে আসছেন না। ভবনটি বাজার থেকে কিছুটা নির্জন স্থানে হওয়ায় অনেকেই আসতে চান না। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে রুমগুলো বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারলে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের প্রাণ ফিরে পাবে।
মন্তব্য করুন