অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৮ ডিসেম্বর : চাঁদপুর মুক্ত দিবস আজ

চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে লেকের ওপর দৃশ্যত ভাসমান মুক্তি স্মৃতিসৌধ অঙ্গীকার। ছবি : কালবেলা
চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে লেকের ওপর দৃশ্যত ভাসমান মুক্তি স্মৃতিসৌধ অঙ্গীকার। ছবি : কালবেলা

ইতিহাসের পাতায় ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর জেলাটি মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকবাহিনীর থেকে ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে সদর থানার সামনে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে চাঁদপুর মুক্ত দিবস উদযাপন করেন।

জানা যায়, পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত জেলা চাঁদপুরে ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। প্রথম দিনেই হামলায় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজারের এক নারী পথচারী নিহত হয়েছিলেন। পরদিন বিকেলে প্রায় ৫ শতাধিক পাকসেনার একটি বহর চাঁদপুর ঢুকে পড়ে। শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়টিতে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে পাকিস্তানি সেনারা। আর পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশ্রামাগারটি তখন রাজাকার ও আলবদররা নির্ধারণ করা দিয়েছিল।

শহরের মেথারোডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবন কানাই চক্রবর্ত্তী বলেন, ৮ এপ্রিল রাতেই চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায়। হামলা দেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। তখন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। ৯ এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানি মেলিটারিরা শহরে ঢুকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এবং পরে শহরের হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মোড়ে কয়েকজনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেসব স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আমার হৃদয়টা হু হু করে কেঁদে ওঠে।

গণি স্কুলের পাশের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা বলেন, চাঁদপুরের বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় হানাদার বাহিনীর একটি টর্চার সেল করা হয়। এখানে চাঁদপুর রেলপথ, সড়কপথ এবং নৌপথে যেসব যাত্রীর সন্দেহ হয়েছে। তাদের ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ করা হতো। পরে ওই মরদেহগুলো মেঘনা এবং পদ্মা নদীতে পাকবাহিনী ফেলে দিত। যার সাক্ষী আজও ডাকাতিয়া-পদ্মা-মেঘনা নদীর মোহনা এবং বর্তমান সময়ে নির্মিত রক্তধারাটি বহন করছে। এই বিষয়টি কিন্তু জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নির্মিত ‘মধ্য রাতের মোলহেড’ নামের নাটকেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

পুরানবাজারের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মজিবুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে বড় স্টেশনে ‘রক্তধারা’ নামে বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়। এর আগে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুশীল, শংকর ও খালেকের নামে ট্রাক রোডে নির্মাণ করা হয় ‘মুক্তিসৌধ’ এবং চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে লেকের ওপর দৃশ্যত ভাসমান মুক্তিস্মৃতি সৌধ ‘অঙ্গীকার’ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে চাঁদপুরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা সংবলিত একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। চাঁদপুর পৌরসভার ৫ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় ‘শপথ চত্বর’ বর্তমানে এটি ‘জয় বাংলা’ চত্বর নামেও পরিচিত।

চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বিনয় ভূষণ মজুমদার বলেন, ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের দোসররা কত লোককে হত্যা করেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। চাঁদপুর জেলায় (তৎকালীন মহকুমা) সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বরে। ওই সময় লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর যৌথ বাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে শুরু করে। পরে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভারতীয় গার্ডস রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ৩১১তম মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণ চালানো হয়। দিশা না পেয়ে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খানের নেতৃত্বে দুটি জাহাজে করে নৌপথে ঢাকার উদ্দেশে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনীর ট্যাংক ও বিমান আক্রমণে নদীতে পাক বাহিনীর চিরকবর রচনা করতে সবাই সক্ষম হয়।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে সর্বজনীনভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা হচ্ছে। মূলত হাসান আলীর মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক স্মৃতি জড়িত থাকায় এ মাঠেই বিজয় মেলা করা হতো, যা বন্ধে রাজাকারের দোসররা ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সব সময়ই তৎপর থাকে। যদিও শহরের বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন এ মেলাটি আউটার স্টেডিয়ামে করা হয়। তরুণ প্রজন্মের সামনে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গৌরব ও চেতনা তুলে ধরতে বিজয় মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নেই নয়ন

গোপালগঞ্জের ৩টি আসনে বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন পেলেন

চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা

যে আসন থেকে লড়বেন সালাহউদ্দিন আহমদ

যে আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হলেন ফজলুর রহমান

২ শতাধিক আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা, দেখে নিন পুরো তালিকা

ঢাকার আসনগুলোতে বিএনপির প্রার্থী হলেন যারা

প্রার্থী তালিকায় লুৎফুজ্জামান বাবর

জকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদলের ১২ দাবি

যৌথ সংবাদ সম্মেলন / ইসকনসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আহ্বান

১০

যে আসন থেকে লড়বেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন

১১

বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচিত সরকার চায় : ড্যানী

১২

২ শতাধিক আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা, কোন আসনে কে?

১৩

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

১৪

দেশের অর্ধেক মেয়েরই পছন্দ জায়েদ খান : নুসরাত ফারিয়া

১৫

শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১৬

শীত এলেও ঠোঁট ফাটবে না, আজ থেকেই শুরু করুন এই ৪ কাজ

১৭

৩ আসনে খালেদা জিয়ার নাম ঘোষণা

১৮

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জবাব দিতে প্রস্তুত মুসলিম দেশ

১৯

তারেক রহমানের নির্বাচনী আসন ঘোষণা করল বিএনপি

২০
X