সিলেট নগরীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় নগরীর জলাবদ্ধ এলাকা থেকে ধীরে ধীরে নামছে পানি। তবে এখনো পানিবন্দি নগরীর বেশকিছু এলাকা। ওইসব এলাকাসহ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো ত্রাণ সেবা অব্যাহত রেখেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
এদিকে, বুধবার (৫ জুন) বৈরী আবহাওয়া ও বন্যা পরিস্থিতি মধ্যেই কানাইঘাট এবং জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে, ভোটের ৪টি কেন্দ্র পরিবর্তনের পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে সকল প্রস্তুতি।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের উপশহর, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, তেরোরতন, সাদারপাড়, সোবহানীঘাট, যতরপুর, কুশিঘাট, তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, পায়রা, দরগামহল্লা, মুন্সীপাড়া, হাওয়াপাড়া, নাইওরপুল, সোনারপাড়া, বালুচর, মীরের ময়দান, কাষ্টঘর, পুলিশ লাইনস, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, খাসদবির, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, লালদিঘিরপার ও মেজরটিলা এলাকায় পানি কিটু কমেছে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে গেলেও ঘরের আসবাবপত্রসহ জিনিস রক্ষা করতে পারেননি। এতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নগরবাসী। তারা এখন বাসা-বাড়ি পরিষ্কার ও গোছাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
তবে, এখনো সিলেটের সুরমা নদীর তীর লাগোয়া ঘরবাড়ির মানুষজন বন্যার শঙ্কায় আছেন। সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে এখনো পানি আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। একইভাবে কমেছে কুশিয়ারা, লোভা, সারি এবং ধলাই নদীর পানি। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ মি.মি বৃষ্টি কম হওয়া এবং সিলেটেও বৃষ্টি না হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সূত্রমতে, মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হয়েছে ২৩ দশমিক ২ মিলিমিটার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে জানা গেছে, সিসিকের বেশির ভাগ এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া মানুষ অনেকেই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিলেট মহানগরীর প্রায় ২৮টি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে বেশ কয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। সেখানে নিয়মিত রান্না করা খাবার ও ওষুধ সামগ্রী প্রদান করা হয়।
নগরীর কাষ্টঘরের বাসিন্দা পুষ্প দে কালবেলাকে বলেন, বন্যার পানিতে আমাদের ঘর তলিয়ে গিয়েছিল। ঘরের মালামাল সব নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি না হওয়াতে পানি কমেছে।
উপশহরে বাসিন্দা সাজেদ আহমদ বলেন, প্রতিবারের বন্যার পানিতে আমাদের বাসায় দুঃখে। পানিতে তলিয়ে গিয়ে আমার ঘরের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। যদি ছড়া-নদী খনন হতো তাহলে আমরা বন্যার কবলে পড়তাম না।
নগরীর বালুচরের বাসিন্দা সাদেক আহমেদ কালবেলাকে বলেন, প্রতি বছর সুরমার পানি ও টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সিলেট নগর। বন্যার পানি বাসা-বাড়ি-অফিসগুলো তলিয়ে যায়। পানিতে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়।
অপরদিকে, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় বৈরী আবহাওয়া ও বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পূর্বেই ষষ্ঠ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বুধবার ৫ জুন। বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি থাকায় এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বুধবার ভোট হবে কি না- এ নিয়ে জনমনে সংশয় ছিল। সরকারি হিসাবে এই দুই উপজেলার অন্তত ৩০০ গ্রাম প্লাবিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ভোটের প্রস্তুতি।
মন্তব্য করুন