চুল পড়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া কিংবা চুল গজাতে সময় লাগা- এই সমস্যাগুলোতে আমরা কম-বেশি সবাই ভুগছি। নানা রকম তেল, শ্যাম্পু, ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করেও যখন ফল মেলে না, তখন একবার নিজের খাবারের দিকে তাকানো দরকার।
আসলে চুল গজানোর সবচেয়ে সহজ, প্রাকৃতিক আর টেকসই উপায়টা লুকিয়ে আছে আমাদের দৈনন্দিন খাওয়াদাওয়ায়। শরীরের মতোই চুলও ভেতর থেকে পুষ্টি চায়। আর সেই পুষ্টি আপনি সহজেই পেতে পারেন কিছু সাধারণ ফল খাওয়ার মাধ্যমে। এমনই বলছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন।
ফল শুধু শরীর ভালো রাখে না- এর মধ্যে থাকা ভিটামিন, মিনারেল আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের গোড়া মজবুত করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, আর চুলকে করে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল।
চলুন জেনে নিই এমন ৫টি ফলের কথা, যেগুলো নিয়মিত খেলে আপনার চুল পড়া কমবে, গজাবে নতুন চুল, আর চুল দেখাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান।
অ্যাভোকাডো : এটিকে বলা হয় সুপারফুড। এতে স্বাস্থ্যকর চর্বি, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা মাথার ত্বককে আর্দ্রতা প্রদান করে এবং চুলের ফলিকল সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। এতে থাকা বায়োটিন উপাদান, ভিটামিন বি চুলের বৃদ্ধিতে অপরিহার্য।
বায়োটিন কেরাটিন উৎপাদনে সহায়তা করে। যা চুলের ত্বক ও নখ তৈরি করে। অ্যাভোকাডোয় থাকা ভিটামিন ই, সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ চাপ থেকে মাথার ত্বক ও চুল রক্ষা করে। বিশেষ করে ভিটামিন ই মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। চুলের ফলিকগুলোর সঠিক পুষ্টির বিষয় নিশ্চিত করে। এতে চুল পাতলা হওয়া, ভেঙে যাওয়া ও শুষ্কতা হ্রাস পায়।
বেরি জাতীয় ফল : স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও রাম্পবেরি ফলগুলোয় ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি, যা স্বাস্থ্যের জন্য ছাড়াও চুলের জন্য উপকারী। এতে বিশেষভাবে ভিটামিন সি রয়েছে, যা অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এটি কোলাজেন উৎপাদনকে উৎসাহিত করে এবং চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে।
কোলাজেন গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন, যা চুলের গঠন ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও বেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, যা চুলের ফলিকলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ও চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বেরি ফল মাথার ত্বক ভালো রাখা ছাড়াও চুলের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
পেঁপে : চুলের বৃদ্ধির জন্য পেঁপে হচ্ছে সহজ ও শক্তিশালী ফল। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ এই ফল সিবাম উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল, যা মাথার ত্বককে আর্দ্র রাখে ও চুলকে হাইড্রেটেড রাখে।
শুষ্ক, খসখসে মাথার ত্বক চুল ভেঙে দিতে পারে এবং চুলের বৃদ্ধি ধীর করে দিতে পারে। এ জন্য ভিটামিন এ মাথার ত্বকের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ভিটামিন এ ছাড়াও পেঁপেতে ফোলেট, ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা চুলের ফলিকলগুলোকে উদ্দীপিত ও শক্তিশালী করে। চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। পেঁপেতে থাকা এনজাইম মাথার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে ও ত্বকের মৃত কোষ অপসারণে সহায়তা করে।
কমলালেবু : কমলালেবু হচ্ছে ভিটামিন সির উৎস, যা কোলাজেন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কমলালেবুতে থাকা উচ্চ ভিটামিন সি চুলকে শক্তিশালী করে ও চুলের গোড়া ভেঙে যাওয়া বন্ধ এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কমলালেবুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর পরিমাণে, যা ফ্রি র্যাডিকেল ও অ্যাক্সিডেটিভ স্ট্রেসের জন্য চুলের ক্ষতি থেকে রক্ষায় কার্যকরী। আবার কমলালেবুর প্রাকৃতিক হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বককে আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহযোগিতা করে। চুলের শুষ্কতা ও চুলের পচন রোধে সহায়তা করে।
আনারস : আনারস শুধু খেতে মজা না, চুলের জন্যও দারুণ উপকারী। এতে আছে ভিটামিন সি, যা চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল ভাঙা কমায়। আনারসে থাকা ব্রোমেলিন নামের এক এনজাইম মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এটা খুশকি ও ত্বকের চুলকানি কমাতেও কাজ করে।
নিয়মিত আনারস খেতে পারেন বা রস পান করতে পারেন। চাইলে আনারস আর মধু মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন।
রোজ ফল খাওয়া কি জরুরি
প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ফল খাওয়া হলে চুলের গোড়া মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর থাকে। এসব ফলগুলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় কোলাজেন উৎপাদন উন্নত হয় এবং চুলের ফলিকলের অক্সিডেটিভ ক্ষতি অনেকটা কমায়। এসব ফলে ফ্যাটি অ্যাসিড ও বিভিন্ন ভিটামিন উপাদান রয়েছে, চুলকে শক্তিশালী করে ও এর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মন্তব্য করুন