কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে, বাড়েনি করদাতা : খলীকুজ্জমান

প্রেস ক্লাবে ‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা। ছবি : কালবেলা
প্রেস ক্লাবে ‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা। ছবি : কালবেলা

দেশে কোটিপতির সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সে হারে করদাতা বাড়েনি। এটা খুবই লজ্জাজনক উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। অথচ কর জিডিপির হার এখনও ১০ শতাংশের নিচে। এ ছাড়া ঋণের হার এখন ৪২ শতাংশ। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের হার ২১ শতাংশ। এটা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্রেস ক্লাবে ‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। ইংরেজি দৈনিক ‘বিজনেস আই’ আয়োজিত এই আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. এম শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, পিকেএসএফের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি আমীন হেলালী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান, অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। বিজনেস আই সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল টিভির সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

অর্থনীতিবিদ খলীকুজ্জমান বলেন, দেশে অর্থনীতি কিংবা সুশাসনের প্রশ্নে বিদ্যমান নীতি কাঠামোর কোনো ঘাটতি আসলে নেই। আমাদের সমস্যা শুধু বাস্তবায়নে। ব্যক্তি পর্যায়ে মূল্যবোধের বিরাট অবক্ষয় সেটি হতে দিচ্ছে না। এ কারণে দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলে দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু চাই আরও সম্পদ বাড়বে, আরও ধনী হবো। এরকম চিন্তাধারা সমাজের বৈষম্যকেও প্রকট করে তুলছে। আমাদের এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে। মানুষকে তার অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া এবং আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করাই এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। যেখানে সংস্কৃতি ও বিনোদন চিন্তাকেও একইভাবে দেখতে হবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের চরিত্রকে দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রুখতে হবে। এজন্য দরকার শিক্ষা, অর্থনীতি ও কর্মের ক্ষেত্রে প্রয়োজন সবার সমান সুযোগ তৈরি করা। একই সঙ্গে সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসা। তাহলে দুর্নীতি ও বৈষম্য দুটোই কমে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, গত ৫০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তার সিংহভাগই হয়েছে ১৫ বছরে। এই দেড় যুগে দেশ অনেক এগিয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তি জুগিয়েছে। পাশাপাশি উদার গণতন্ত্রের চর্চা তৈরি হয়েছে। এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে আরও এগিয়ে নিতে আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে আগামীর উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আর্থিক খাতে সুশাসনের কথা বলা হয়েছে। দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স হিসেবে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঋণ ও করখেলাপিদের জেলে নেওয়ার সঙ্গে প্রয়োজনে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও ঘোষণা দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় নীতি সুদহার ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. এম শামসুল আলম বলেন, বৈষম্য কমাতে পারিনি দুর্নীতির কারণে। প্রবৃদ্ধি ব্যাপক হারে বাড়ার কারণেও বৈষম্য কিছুটা বেড়েছে। তবে এই বৈষম্য কমাতে সরকার সামাজিক সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। গরিবদের মধ্যে নগদ টাকার হার বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বিভিন্ন ভাতা বাবদ নিম্ন আয়ের মানুষ পেয়ে থাকেন। এখন সুযোগের সমতা এসেছে। বড় চাকরির ক্ষেত্রে কোটা নেই, যেটা একপ্রকার অন্যায়ই ছিল। এর ফলে মেধাবীরা বিসিএসে চলে আসছেন। অন্যদিকে দেশের রেমিট্যান্স বেড়েছে। ৭২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হয়েছে বাংলাদেশ। একটা সময় সরকারি বিনিয়োগ ছিল ৮৭ শতাংশ। এখন সেটা উল্টো হয়েছে। বেসরকারি খাতই এখন চালিকা শক্তি। সরকারের উদ্দেশ্যও ছিল সেটা। ফলে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে অর্থনীতিতে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। গ্রামাঞ্চলে সুযোগ-সুবিধার আওতা আরও বাড়াতে হবে। সেটা হয়েছে, হচ্ছেও। এখন গাড়ি নিয়েই প্রত্যন্ত গ্রামে চলে যাওয়া যায়। প্রায় শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের হারও কমে এসেছে। শিক্ষার হারও বেড়েছে। যা বৈষম্য কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন সামনে আমাদের কাজ হবে দুর্নীতিকে আরও কমিয়ে আনা। একইভাবে ন্যায্যভাবে কর আদায় করা। আগামীতে এসব বিষয়সহ ঋণ খেলাপি, বিল খেলাপি সব নীতির বিষয়েই আগামী সরকার অবশ্যই কঠোর হবে।

দেশের অর্থনীতির বর্তমান চিত্র তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ’৭১-পরবর্তী আমাদের আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, তবে বৈষম্য কমেনি। এটা কমাতে হলে গ্রামে বিনিয়োগ করতে হবে, বিশেষ করে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সব মানুষ যাতে উন্নয়ন সুফল ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়নটাও হতে হবে সুষম ভিত্তিতে। যারা উপর তলার মানুষ তারা সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। রাজনীতিবিদ, আমলা ও অসাধু ব্যবসায়ীর ত্রিভুজ ক্ষমতার বলয় ভাঙতে হবে। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এসব করতে পারলে তবেই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, স্বাধীনতার লক্ষ অর্জনে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে অর্থনৈতিক মুক্তি, ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়া এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অন্যনা সাফল্য অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

থালাপতির মতো কেন জনতার নায়ক হতে পারলেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা?

সেনাবাহিনীর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা, ৮ সদস্য আহত

ইরানের সঙ্গে বসছে ইউরোপের তিন শক্তি

নিউইয়র্কে কনস্যুলেটের ঘটনায় মিশনের ব্যাখ্যা

আজকে স্বর্ণের বাজার দর

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানি শুরু

বোলিং করতে না দেওয়ায় অধিনায়ককে গুলি করে হত্যা

জেনে নিন উচ্চ রক্তচাপের ১২ কারণ

১৬ বছর বয়সী কিশোরের ইতিহাস গড়া ম্যাচে লিভারপুলের শ্বাসরুদ্ধকর জয়

রুমিন ফারহানাকে নিয়ে অজানা গল্প বললেন আরজে কিবরিয়া

১০

গাঁজা নিয়ে কারাগারে প্রবেশকালে কর্মচারী আটক

১১

ডাকসুর প্রচারণায় মানতে হবে যেসব আচরণবিধি

১২

চাকসু নির্বাচনে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের অব্যহতি চেয়েছে ছাত্রদল

১৩

চমক রেখে দল ঘোষণা করল ব্রাজিল

১৪

৯ সংকেতে বুঝবেন টেস্টোস্টেরন হরমোন কমেছে

১৫

ইসরায়েলকে একহাত নিল ফ্রান্স-জার্মানি

১৬

দেশের চার এলাকাকে ‘অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন’ ঘোষণা

১৭

মাঝরাতে মিথিলার খুশির খবর

১৮

‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

১৯

সাব ব্রাঞ্চ ইনচার্জ পদে ইউসিবি ব্যাংকে চাকরির সুযোগ

২০
X