‘গাছ কাটতে অনুমতির বিধান কি ঢাকাকে সবুজ করবে?’ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় কোনো গাছ কাটতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমি বারবার বলেছি, গাছ কাটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমার কাউন্সিলর, ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি, অনুমতি ছাড়া ডিএনসিসি এলাকায় কেউ গাছ কাটতে পারবে না। গাছ কাটার আগে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করতে হবে। কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
ঢাকাকে সবুজ করতে এ সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে এ বিষয়ে পাঠকরা লেখেন,
মো. হাফিজুর রহমান : গাছ কাটার অনুমতির বিষয় মুখ্য নয়। প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। সরকারি জায়গার গাছ কাটার বিষয়ে কঠোর আইন এবং তা প্রয়োগ করতে হবে। তা ছাড়া শুধু অনুমতির বিধান করলে রক্ষক ও ভক্ষক একাকার হয়ে যাবে।
নুরুল আক্তার : গাছ প্রকৃতির বন্ধু। এর পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার। বিশেষ করে ফুল এবং ফলদ গাছ আমাদের বেশি উপকার দেয় এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই ঢাকার রাস্তাগুলোতে ফুল এবং ফলের গাছ লাগিয়ে ঢাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব মনে করি।
এসএম সোহাগ : গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান। কথাটা শুধু কিছু বিলবোর্ড ও বইয়ে সীমাবদ্ধ। নতুন প্রজন্ম গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা সম্পর্কে উদাসীন। কারণ, তারা এ বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নয়। নতুন প্রজন্ম শুধু ই-প্ল্যাটফর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই গাছের প্রতি তাদের কোনো ভালোবাসা ও আকুতি নেই। আমি মনে করি, নতুন প্রজন্মকে গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা করার সুযোগ করে দিলে গাছের প্রতি এবং পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রাজিব শিকদার বিরাজ : গাছ লাগানো এটি অনেক বড় মনের মানুষের কাজ। আমরা অনেকেই অনেকভাবে টাকা নষ্ট করি কিন্তু অল্প কিছু বাঁচিয়ে যদি গাছ লাগানো হয় তাহলে অনেক লাভ যেমন, গাছ সব সময় জিকিরে থাকে, তার সওয়াব যে রোপণকারীও পাবে। অনেক পাখির বাসস্থান হবে। পাখিদের খাবারের ব্যবস্থা হবে। গাছের ছায়ায় অনেক ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিতে পারবে।
দিলরুবা ইয়াসমিন : অনেক দেশে দেখেছি গাছ রোপণ করার বিষয়ে কড়া আইন রয়েছে। একটা গাছ কাটলে দুটা গাছ লাগাতে হবে, এমন নিয়ম অনেক দেশে বিদ্যমান। আর আমাদের দেশে গাছ কাটতে নিষিদ্ধ করবে কি উল্টো অনুমতির কথা বলে।
মেহেদী হাছান খালিক : যারা সাধারণ বাগান বা স্থায়ী গাছ লাগাবেন, সেগুলো তারা তাদের ইচ্ছামতো কাটতে পারবেন না- এমন আইন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আছে। এ আইনের মাধ্যমে দেশের সব বনাঞ্চলকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, লাউ গাছ কাটা যাবে না। আইনে স্থায়ী গাছের কথা বলা হয়েছে।
মো. তারেক : এক কথায় গাছ না কাটাই ভালো। ঢাকাসহ সারা দেশে রাস্তাঘাটে যেসব গাছ আছে এগুলো থাকলে সবাই অক্সিজেন পাবে। আরও বেশি বেশি গাছ লাগানো উচিত। রাস্তাঘাট ও বাড়ির আঙিনায় ফলদ, ওষধি গাছ থেকে শুরু সব ধরনের গাছ লাগানো দরকার।
নুর আহমাদ সিদ্দিকী : উন্নত দেশে গাছ রেখেই উন্নয়ন করে আর আমাদের দেশে ঠুনকো অজুহাতে গাছ কেটে ফেলে। ঢাকা সিটির গাছ কাটার কোনো দরকার ছিল না। তবুও উন্নয়নের নামে পুরোনো গাছ কেটে ফেলছে। এটা উন্নয়নের নামে জাতির সঙ্গে ধোঁকাবাজি এবং প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতামি। উন্নয়নের নামে গাছ কেটে নিজেদের পকেট ভর্তি করছে কর্তৃপক্ষ। গাছ না কেটে উন্নয়ন সম্ভব। এক দিকে স্লোগান দেয় ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’। অপরদিকে ঠুনকো অজুহাতে গাছ কেটে শেষ করছে। এটা দ্বিচারিতা নয় কি? উন্নয়ন হোক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে।
মো. সিরাজুল মনির : অনুমতির বিধান রেখে গাছ কাটার বিষয়টি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। তবে এখানে কোনো প্রকারের দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি হচ্ছে কি না সেটা দেখার বিষয় অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি। কারণ, বাংলাদেশের সব দপ্তরে ঘুষ-দুর্নীতি এবং কমিশন বাণিজ্য চলার কারণে কোনো কিছু সঠিকভাবে করা হয়ে উঠে না। সে ক্ষেত্রে ঢাকা সবুজ ও সুন্দর করার জন্য গাছ কাটার যে অনুমতির বিধান রাখা হচ্ছে তা অবশ্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করি। যেমন ইচ্ছা তেমন করার দেশ বাংলাদেশ। তাই এখানে যাতে যে যেমন ইচ্ছা তেমন করতে না পারে সেটার দিকে অবশ্যই সিটি করপোরেশনকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশন সমন্বিত কাজ করলে আশা করি এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। কারণ, এখানে সব দপ্তরের অভ্যাস হলো এক দপ্তর আরেক দপ্তরকে দোষে। সেটা যদি পরিহার করা যায় এবং সমন্বয়ভাবে কাজ করে তাহলে অবশ্যই আমরা সবুজ ও সুন্দর একটা নগরী পাব।
মন্তব্য করুন