গৌতম সাহা, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ঈদে আমার পাঞ্জাবি কিনে দিবে কে’

বেইলি রোডের আগুনে নিহত নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা শান্ত হোসেনের ভাই প্রান্ত হোসেন। ছবি : কালবেলা
বেইলি রোডের আগুনে নিহত নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা শান্ত হোসেনের ভাই প্রান্ত হোসেন। ছবি : কালবেলা

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি আর ঈদ মানে সবার জীবন হয়ে উঠে আনন্দময় ও উৎসবমুখর। কিন্তু ঈদ সবার আনন্দের হয় না। কিছু মানুষের জন্য হয় বিষাদের। ঢাকার বেইলি রোডের আগুনে নিহত নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা শান্তর পরিবারে এবারের ঈদে নেই কোনো আনন্দ। শান্তকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা ভুলে গেছেন ঈদের কথা।

‘গত ঈদে আমার ভাই নিজে না কিনে আমায় পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিল। এবার ঈদে কে কিনে দিবে আমায় পাঞ্জাবি’। ভাইয়ের স্মৃতি মনে করে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন নিহত শান্ত হোসেনের ভাই প্রান্ত হোসেন।

শান্তর ভাই প্রান্ত হোসেন কালবেলাকে বলেন, গত ঈদে আমার ভাই দুনিয়াতে ছিল। ভাই আমাকে একটি পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিল। তার জন্য আর আমার জন্য পাঞ্জাবি কিনতে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু মার্কেটে যাওয়ার পরে ভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে দেয় নাই। বলেছিল বাকি টাকা বাসায় দিয়ে দাও। সে ছিল পরিবারের সবার বড়। ভাই আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনের অন্যতম খুঁটি ছিল। কখনো নিজের কথা চিন্তা করে নাই, নিজেরে পরিবারের জন্য বিলিয়ে দিয়েছে সব। এবার ঈদে আমার ভাইও নাই আমার পাঞ্জাবিও নাই। এবার কে কিনে দিবে আমায় পাঞ্জাবি।

তিনি বলেন, প্রতি ঈদে আমার ভাই আমারে শপিং করিয়ে দিত। এবার তার না থাকা আমাদের অনেক কষ্ট দিচ্ছে। আর্থিকভাবেই আমরা এখন অসচ্ছল হয়ে পড়েছি। ভাই থাকতে আমাদের যেই সচ্ছলতা ছিল তা এখন নাই। সবার কাছে একটাই চাওয়া যেহেতু আমার ভাই চলে গেছে সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।

প্রান্ত হোসেন আরও বলেন, রমজান শেষে গতবার যে ঈদের আনন্দ ছিল এবারের ঈদে আমাদের কোনো আনন্দ নাই । ভাইয়ের কথা মিনিটে মিনিটে মনে পড়ছে। আমার মা প্রতিদিনই কান্না করে। এমনকি রাতে ঘুমের মধ্যেও কান্না করে। এখনো মনে হয় না আমার ভাই নাই। মনে হয় বেইলি রোডে চাকরি করছে সে।

তিনি বলেন, আমার ভাই সবচেয়ে বেশি আমাকে নিয়েই ভাবত। ভাই পরিবারের অসচ্ছলতার চাপে বেশি পড়াশোনা করতে পারেনি। তার খুব ইচ্ছা ছিল আমাকে পড়াশোনা করাবে। এমনকি মারা যাওয়ার দিনও আম্মুর কাছে ভাই আমার পড়ালেখার কথা জিজ্ঞেস করছিল। আমার ভাই যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত সেখানকার মালিক সহযোগিতা তো দূরের কথা, একটাবার ফোনও দেয় নাই।

প্রশান্ত বলেন, এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার অবশ্যই সঠিক তদন্ত চাই। যাদের অবহেলায় আমার ভাই শান্ত মারা গেছে তাদের বিচার চাই। সরকারের কাছে দাবি থাকবে আমাদের মতো আরও যারা এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে দাঁড়ান।

নিহত শান্তর মা লিপি আক্তার কালবেলাকে বলেন, প্রতি ঈদে পরিবারের সবার পোশাকের জন্য টাকা দিত শান্ত। সবাই ওর টাকায় শপিং করতাম। আমার ছেলে বেঁচে থাকতে বলেছিল, এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে অগ্রিমভাবে ছুটির কথা বলে রেখেছিল। ওর আর ঈদ করা হলো না। আমার ছেলেও বাঁইচ্যা নাই, এবার ঈদই নাই আমাদের।

তিনি বলেন, কেমন করে তাজা প্রাণ হারিয়ে গেল। আমার বুক খালি হয়ে গেল। মৃত্যুর আগে আমার পোলাডা ভিডিও কল দিছিল। আমার কাছে দোয়া চাইছিল, আমি তো বুইঝা উঠতে পারি নাই। এইডাই আমার পোলার শেষ ফোন বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শান্তর মা। এবার ঈদ আমাদের জন্য না। ঈদ তো কষ্টের। শান্ত থাকলে তো কষ্ট কি জিনিস বুঝতামই না।

লিপি আক্তার বলেন, গতবার ঈদে ছিল সে, এবার তো আর আসল না। আর আসবেও না। ভালো তো থাকতে পারছি না। আমি তো মা, আমি তো ভুলতে পারি না। আমার কাছে প্রতিটি সেকেন্ড প্রতিটি মিনিটই কষ্টের। আমার বড় ছেলে নাই কেমনে ভালো থাকি। অনেক কষ্টে জীবন কাটছে আমাদের। আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের নাম যেমন শান্ত কাজও শান্ত ছিল। অসচ্ছল পরিবারকে কীভাবে সচ্ছল করা যায় সবসময় সে চিন্তা করত। পরিবারের জন্য নিজের সব বিলিয়ে দিয়েছে সে। প্রতি মাসের বেতন আমার কাছে দিয়ে দিত। নিজের জন্য ভাবত না। যার কাছে গিয়ে মরল সেই মালিক একবারও কোনো খোঁজ নিল না। বেইলি রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ আসতে কতটুকু সময় লাগে, একবার জানাজাতেও আসতে পারল না।

নিহত শান্তর মা বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর পর কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি। সরকারের কাছে আমাদের জন্য সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সঙ্গে আমার ছেলের মতো যেন কারও মায়ের বুক খালি না হয়। যাদের অবহেলায় আমার ছেলেকে হারিয়েছি তাদের বিচার চাই। আর যেন কেউ এভাবে অকালে প্রাণ না হারায়।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের আটতলা ভবনে আগুনে ৪৬ জন মারা যান। এ ঘটনায় জুস বার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা শান্ত হোসেনও মারা যান। পরে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এনে ফতুল্লার ভূইঘর বড় মসজিদে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

তদন্তে বের হয়ে আসে ভবনের নিচতলার খাবার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। এ ঘটনায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এ আগুনের ঘটনায় মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

০২ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

টিকাটুলিতে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

বিয়ের প্রলোভনে ‘ধর্ষণ’, পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে যান ছাত্রদল নেতা, অতঃপর...

ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

১০

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

১১

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

১২

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

১৩

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

১৪

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১৫

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১৬

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১৭

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৮

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৯

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

২০
X