ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এবার গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারকে এ হামলায় নিশানা করা হয়েছে।
বুধবার (১৪ মে) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের গাজা শাখার নেতা মুহাম্মদ সিনওয়ারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিশ্চিত না করলেও জানিয়েছে, হামাসের একটি ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, যা ইউরোপিয়ান হাসপাতালের নিচে অবস্থিত ছিল।
হামলার পরপরই প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালে আশেপাশের এলাকা থেকে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে এবং ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে একের পর এক ভারী বোমা ফেলা হচ্ছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার প্রভাবে মাটির নিচে সুড়ঙ্গপথের অস্তিত্ব উন্মোচিত হয়েছে, যদিও সেখানে একটি স্কুলের ছবি দেখা যায়, হাসপাতালের নয়।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় ১৬ জন নিহত এবং ৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। তবে সিনওয়ারের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিশ্চিত করা যায়নি।
হামলার কয়েক ঘণ্টা পর, উত্তরের গাজা থেকে তিনটি রকেট ইসরায়েলের আশকেলন এবং সদেরোটের দিকে ছোড়া হয়। আইডিএফ জানায়, এর মধ্যে দুটি রকেট প্রতিরোধ করা হয়েছে এবং একটি খোলা এলাকায় আঘাত করেছে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সামরিক শাখা ইসলামিক জিহাদ।
নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, মুহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, যদি সিনওয়ার ওই সুড়ঙ্গপথে থাকতেন, তাহলে তিনি নিহত হয়ে থাকতে পারেন।
মোহাম্মদ ইব্রাহিম হাসান সিনওয়ার একজন ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ এবং হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের একজন প্রভাবশালী নেতা। তিনি গাজা উপত্যকায় হামাসের নেতৃত্বে রয়েছেন এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে তার বড় ভাই ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর পর হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালে মোহাম্মদ ইব্রাহিম হাসান সিনওয়ার গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় আল-মাজদাল আসকালান (বর্তমানে ইসরায়েলের অ্যাশকেলন) থেকে বিতাড়িত হয়ে গাজায় আশ্রয় নিয়েছিল। তার বড় ভাই ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাসের সাবেক প্রধান ছিলেন।
তিনি ১৯৯১ সালে হামাসের সামরিক আন্দোলনে যোগ দেন। তার প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশিত হয়নি, তবে তিনি খান ইউনিসে হামাসের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সিনওয়ার ২০০৫ সালে হামাসের খান ইউনিস ব্রিগেডের কমান্ডার নিযুক্ত হন। এই ব্রিগেড গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের সামরিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি এই ভূমিকায় মোহাম্মদ দেইফের (তৎকালীন কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন এবং দেইফের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠে নেতৃত্ব দেন।
২০০৬ সালে ইসরায়েলি সৈনিক গিলাদ শালিতের অপহরণে মোহাম্মদ সিনওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি দুরমুশ গোত্রের সঙ্গে জোট গড়ে এই অপহরণ পরিকল্পনা করেন, যা পরবর্তীতে ২০১১ সালে ১,০২৭ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে শালিতের মুক্তির দিকে নিয়ে যায়। এই ঘটনা তার কৌশলগত দক্ষতা এবং নেতৃত্বের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সিনওয়ার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের ‘আল-আকসা ফ্লাড’ হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে জানা যায়। এই হামলায় ১,২০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনের বেশি জিম্মি করা হয়। তিনি তার ভাই ইয়াহিয়া এবং মোহাম্মদ দেইফের সঙ্গে এই হামলার পরিকল্পনায় সক্রিয় ছিলেন।
মন্তব্য করুন