বাবা-ছেলের চক্রান্তে সৌদি বাদশাহী আসল হকদারকে হটিয়ে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ করা হয়। তাই ক্ষমতার লোভে অন্যের স্বার্থ যে জলাঞ্জলি দিতে সৌদি যুবরাজের একটুও বাঁধবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরে যখন নিজের মুসলিম ভাইবোনদের নির্বিচারে হত্যা করছে ইসরায়েল- অথচ সংঘাত বন্ধে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া কার্যত আর কোনো পদক্ষেপই নেয়নি সৌদি আরব।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে সৌদি আরব। আর ধর্মীয় কারণেও বিশ্বের মুসলিমদের কাছে সৌদি আরবের অন্য রকম গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার পর ভিন্ন এক সৌদি আরব দেখছে বিশ্ব। নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যেমন শক্ত হাতে দমন করেছেন, তেমনি সামরিক সক্ষমতায় নির্বুদ্ধিতারও পরিচয় দিয়েছেন।
ইয়েমেনে বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করছে সৌদি আরব, এমন উদ্বেগ থেকে ক্ষমতা বসেই রিয়াদের কাছে আগ্রাসী অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেন বাইডেন। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সৌদি আরবের মার্কিন অস্ত্র কেনা নিয়ে পর্দার পেছনে আরও একটি বিষয়ে দর কষাকষি চলছে, তা হচ্ছে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরব সম্পর্ক স্থাপন। এখন বাইডেন প্রশাসন যদি অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তাহলে এর মানে দাঁড়াচ্ছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছে রিয়াদ। আর যদি এমনটা ঘটে, সেটি ফিলিস্তিনিদের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল হবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চাপ রয়েছে। ওয়াশিংটনের শর্ত অনুযায়ী, তেল আবিব ও রিয়াদ হাত মেলাতে অস্ত্র বিক্রিতে বাধা নেই। ফাইন্যানশিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে তা বাইডেন প্রশাসন ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করবে।
চলতি সপ্তাহে কয়েকজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ওয়াশিংটন ও রিয়াদ বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের খুব কাছাকাছি রয়েছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও সৌদির বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা মতো বিষয়গুলো এর অন্তর্ভুক্ত। এসব চুক্তির সঙ্গে আরও একটি বিষয় জড়িয়ে আছে, তা হচ্ছে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক স্থাপন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকতে ৯ বছর আগে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে ইয়েমেনে রিয়াদের বন্ধুবৎসল সরকারের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে নিরপরাধ বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করেছে সৌদি আরব। এরপরই রিয়াদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করে দেন বাইডেন।
মাঝখানে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড ওয়াশিংটন-রিয়াদের সম্পর্কে ফাটল ধরায়। তবে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের নীতি বাস্তবায়নে সৌদি আরবের বিকল্প নেই বলে উপলব্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার মুসলিম বিশ্বে বন্ধু বাড়াতে মিত্র ইসরায়েলের আবদার মেটানোরও একটা বাড়তি চাপ আছে। সবমিলিয়ে গেল তিন বছরের তিক্ততা ভুলে সামনে এগোতে চাইছে ওয়াশিংটন।
মন্তব্য করুন