বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৬:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তিস্তার পানি কমছে, বাড়ছে নদীভাঙন : আতঙ্কে তীরবর্তী মানুষ

পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে বাড়ছে নদীভাঙন, আতঙ্কে তিস্তার তীরবর্তী মানুষ। ছবি : কালবেলা
পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে বাড়ছে নদীভাঙন, আতঙ্কে তিস্তার তীরবর্তী মানুষ। ছবি : কালবেলা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ করে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এমন চিত্র দেখা গেলেও বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। এতে নদীতীরবর্তী এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৬টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি ছিল বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) সমান। সকাল ৯টায় তা কমে ৫২ দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার হয়, অর্থাৎ ৮ সেন্টিমিটার নিচে নামে। তবে দুপুরের পর আবারও পানি বাড়তে শুরু করে এবং কিছু সময়ের জন্য বিপৎসীমা অতিক্রম করে।

তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, ‘রাত থেকেই পানি কিছুটা কমেছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও উজানে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছি।’

এর আগে মঙ্গলবার রাতেও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়, ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ আতঙ্কে রাত কাটান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এরইমধ্যে ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি, গয়াবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে নদীতীরবর্তী একাধিক পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

খালিশা চাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কিছু আমন ধানের চারা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পানি কমলেও, যদি আবার বন্যা আসে, তাহলে নতুন করে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানিতে আমরা প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমরা আর ত্রাণ চাই না, চাই দ্রুত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন। এটাই এখন আমাদের বাঁচার একমাত্র উপায়।’

ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘তিস্তার পানি আপাতত বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বড় ধরনের ঝুঁকি নেই, তবে আমাদের টিম সতর্ক রয়েছে এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাত হলে তিস্তার পানি আবারও বাড়তে পারে। ফলে এখনও ঝুঁকি কাটেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, ‘নদী তীরবর্তী জনগণের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে।’

জানা গেছে, তিস্তার দুই তীরে বসবাসকারী মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। একদিকে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমছে, অন্যদিকে নদীভাঙনের দগদগে ক্ষত আবারও নতুন করে তীব্র দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য সাধারণ মানুষের কণ্ঠে এখন সবচেয়ে বড় দাবি—‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ ঘোষণা জুলাই ঐক্যের

হাদিকে গুলি / সেই মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন কবির

কারাগারে ফুটবল খেলা, বন্দিদের কাছে কর্তৃপক্ষের হার

জামায়াতের এক নেতা বহিষ্কার

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য বিজয় র‍্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার পথে ছাত্রলীগ কর্মী আটক

ইডেনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও জার্নালের মোড়ক উন্মোচন

ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান বিজয় দিবস উদযাপন

তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার সুযোগ পাবেন যে ১০ জন

‘স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান আড়াল করা হয়েছিল’

১০

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মাউশির বিশেষ নির্দেশনা

১১

মনোনয়ন না পেয়ে এবি পার্টিতে যোগ দিলেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা

১২

‘হাওয়া’র পর সুমনের ‘রইদ’

১৩

সিলেটে উৎসবমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

১৪

হাদির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যা জানা গেল 

১৫

আইপিএল নিলামে দল পেলেন না তাসকিন

১৬

ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন

১৭

পালাতে গিয়ে মেরুদণ্ড ভাঙলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী

১৮

জনসংখ্যা বাড়াতে ইন্টারনেট-বিদ্যুৎ বন্ধ রাখবে যে দেশ

১৯

শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান ও আত্মত্যাগ

২০
X