

কুমিল্লার দেবিদ্বারে স্কুল প্রতিষ্ঠার নামে কৃষকের ২০ শতাংশ পৈতৃক জমি জোরপূর্বক দখল ও বনায়নকৃত প্রায় ১৭৫টি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। থানায় অভিযোগের পর হুমকি ও ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগী কৃষক হাবিবুর রহমান।
গত ২৫ অক্টোবর উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুলতানপুর গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রভাবশালীরা জমি দিতে চাপ প্রয়োগ করে স্থানীয় কৃষক হাবিবুর রহমানকে। ওই কৃষক জমি দিতে রাজি না হলে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২৫টি গাছ কেটে ফেলে প্রভাবশালীরা। পরে ২৫ অক্টোবর আরও ১৬০টি গাছ কেটে নেয় এবং ভেকু দিয়ে জমির মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। হাবিবুর রহমান থানায় অভিযোগ দিলে জীবননাশের হুমকিতে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিন জানা গেছে, কয়লা ব্যবসায়ী মো. শাহনেওয়াজ শাহীন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এতে গ্রামের কয়েকজনের সম্মতিতে জমি নির্ধারণের সময় হাবিবুর রহমানের জমিও নির্বাচন করা হয় এবং তার তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে জমির অনেকগুলো গাছ কেটে ফেলা হয়।
কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমার ২০ শতাংশ পৈতৃক জমি জোর করে নিতে চায় শাহীন ও তার সমর্থকরা। আমি রাজি না হওয়ায় ৯ সেপ্টেম্বর তারা প্রথমে ২৫টি গাছ কেটে ফেলে, পরে ২৫ অক্টোবর আরও ১৬০টি গাছ কেটে নেয়। থানায় অভিযোগ করার পরও হুমকি অব্যাহত থাকায় জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছাড়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছি।
ভুক্তভোগীর আত্মীয় মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা বললেও উদ্দেশ্য আসলে খাসজমি দখল করে এবং সৌন্দর্য বর্ধনে হাবিবুর রহমানের জায়গা নিয়ে মাছের প্রজেক্ট করা। কারণ, এলাকায় ইতোমধ্যে অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে কামিল মাদ্রাসা, সাইচাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও চান্দপুর হাইস্কুলসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তবে স্থানীয় বাবুল মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, নজরুল ইসলাম, শরীফ হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, গ্রামবাসী ৯৯ শতাংশ জমির মধ্যে ২২ শতাংশ খাস ও ৭৭ শতাংশ মালিকানাধীন জমি নিয়ে স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। হাবিবুর রহমানের জমির বিনিময়ে আরও ১৭ শতাংশ জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আগামী ৩০ অক্টোবর থানায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হলে এ এলাকার মানুষ আলোকিত হবে। কিন্তু গ্রামের কয়েকজনের সম্মতিতে হাবিবুর রহমানের জমির একটি অংশে রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজন হলে কিছু গাছ কাটা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ নেওয়াজ শাহীন বলেন, আমি সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করি। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি প্রস্তাবিত পরিচালনা কমিটি করেছি। কমিটির সবাইকে নিয়ে অভিযোগকারী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে তার জায়গার দাম নির্ধারিত করে আমরা কেনার সিদ্ধান্ত নিই। তবে এলাকার কিছু লোকজনের কুপরামর্শের কারণে আমাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছেন। তবে স্কুলের স্বার্থে বিষয়টি ঠিক হয়ে যাবে।
দেবিদ্বার থানার ওসি শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। উভয়পক্ষকে আগামী শুক্রবার থানায় ডেকেছি, সমাধান না হলে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য এসিল্যান্ডকে বলে দিয়েছি।
মন্তব্য করুন