ঘুম হচ্ছে আমাদের শরীর আর মনের রিচার্জ বোতাম। সারাদিনের কাজের পরে আমাদের শরীর আর মন দুটোই যেন একটুখানি বিশ্রামের জন্য মুখিয়ে থাকে। কিন্তু ঠিক সময়মতো ঘুম না আসা, মাঝরাতে উঠে বসে থাকা বা সকালে ঘুম থেকে উঠেই ক্লান্ত লাগা— এসব কি আপনার পরিচিত সমস্যা?
ভালো ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত লাগে, মন খারাপ থাকে, কাজেও মন বসে না। অথচ কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে ঘুমের মান অনেকটাই উন্নত করা সম্ভব। এই লেখায় আমরা এমন ১২টি সহজ ঘুমের অভ্যাস সম্পর্কে জানবো, যেগুলো মেনে চললে আপনি আরও ভালো ঘুম পাবেন আর সকালে উঠে নিজেকে সতেজ ও শক্তিময় মনে হবে।
আরও পড়ুন : প্রথম দেখাতেই মানুষ চিনে নিন ৫ মনোবিজ্ঞানভিত্তিক ট্রিকসে
আরও পড়ুন : ঘুম না হলে সহজ ব্যায়ামে মিলতে পারে সমাধান
চলুন দেখে নিই ঘুমকে আরও মধুর করে তুলতে ঠিক কোন কোন অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা দরকার।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা : ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মানলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি ঠিকমতো কাজ করে। প্রতিদিন, এমনকি ছুটির দিনেও একই সময়ে ঘুমাতে গেলে আর ঘুম থেকে উঠলে ঘুম আসা সহজ হয়, ঘুমও গভীর হয়।
ঘুমের আগে একটি শান্ত রুটিন তৈরি করুন : ঘুমের আগে যদি কিছু আরামদায়ক কাজ করার অভ্যাস করেন, যেমন— বই পড়া, হালকা স্ট্রেচিং, ধ্যান বা গরম পানিতে গোসল, তাহলে মন ও শরীর দুটোই শান্ত হয়।
শুধু খেয়াল রাখবেন মোবাইল বা টিভির মতো স্ক্রিনের দিকে যেন না তাকান। কারণ এসব থেকে নীল আলো আসে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার কমান : ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ সব বন্ধ করে দিন। স্ক্রিনের নীল আলো ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’-এর ক্ষরণে বাধা দেয়। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন : প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করলে ঘুমের মান ভালো হয়। সকাল বা বিকেলে সূর্যের আলোয় হাঁটতে পারলে আরও ভালো। তবে ঘুমানোর এক-দুই ঘণ্টার মধ্যে ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো।
ক্যাফেইন কম খান : চা, কফি, চকোলেট বা কিছু ঠান্ডা পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন অনেকক্ষণ পর্যন্ত শরীরে সক্রিয় থাকে। দুপুরের পর এগুলো না খাওয়ার চেষ্টা করুন, নইলে রাতে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে।
ঘুমের ঘর আরামদায়ক করে তুলুন : ঘর যেন ঠান্ডা, শান্ত ও অন্ধকার হয়। আরামদায়ক বিছানা, বালিশ আর পাতলা চাদর ঘুমের মান অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজন হলে ব্ল্যাকআউট পর্দা, চোখ ঢাকার কাপড় বা সাদা শব্দের মেশিন ব্যবহার করতে পারেন।
বিছানাকে শুধু ঘুমের জন্য রাখুন : বিছানায় শুয়ে কাজ, গল্প বা মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না। শরীর যেন বুঝতে শেখে— বিছানায় মানেই ঘুম।
শুধু তখনই শুয়ে পড়ুন যখন ঘুম পাচ্ছে : ঘুম না এলে বিছানায় শুয়ে উল্টাপাল্টা ভাবার বদলে উঠে কিছু শান্ত কাজ করুন। যেমন— বই পড়া বা হালকা যোগব্যায়াম। ঘুম এলে তবেই আবার বিছানায় ফিরে যান।
দিনের ঘুম কমান : দুপুরে বেশি ঘুমালে রাতে ঘুমে সমস্যা হতে পারে। যদি ঘুমাতেই হয়, তাহলে ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম সীমাবদ্ধ রাখুন এবং বিকেলের পরে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন।
ঘুমের আগে মানসিক চাপ কমান : চিন্তা বা দুশ্চিন্তা ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ ধ্যান করুন, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন বা মনের ভাবনা একটি খাতায় লিখে ফেলুন— দেখবেন মাথা হালকা লাগবে।
রাতে হালকা খাবার খান : ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী খাবার খাবেন না। এতে হজমে সমস্যা হতে পারে। অ্যালকোহল ও ধূমপানও ঘুমের মান নষ্ট করে, তাই এগুলো থেকেও দূরে থাকুন।
আলো নিয়ন্ত্রণে রাখুন : দিনে বেশি আলোয় থাকুন আর রাতে আলো কমিয়ে দিন। রাতে হালকা রঙের আলো ব্যবহার করুন, অপ্রয়োজনীয় আলো বন্ধ করে দিন এবং ফোনে ‘নাইট মোড’ চালু রাখুন।
ভালো ঘুমের জন্য দামি ওষুধ নয়, দরকার কিছু নিয়মিত এবং সহজ অভ্যাস। দিনের রুটিন, রাতের প্রস্তুতি, ঘরের পরিবেশ— সবকিছুই ঘুমের মানে প্রভাব ফেলে।
এই ১২টি সহজ অভ্যাস যদি প্রতিদিন মেনে চলেন, তাহলে ঘুম শুধু গভীরই হবে না, সকালটাও হবে সুন্দর ও সতেজ। তবে ঘুমের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
শুভ রাত্রি, সুস্থ ঘুমে জেগে উঠুন সকালে!
আরও পড়ুন : তরুণদের স্থূলতা কি বিপদের ইঙ্গিত
আরও পড়ুন : আলু খেয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন কি
সূত্র : হেলথলাইন
মন্তব্য করুন