সরকারের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশের গণতন্ত্রের উত্তরণের যাত্রাপথকে সংকটে ফেলতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ নিতে ওঁতপেতে রয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থানা সংলগ্ন স্থানে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তারেক রহমান এ কথা বলেন। গত বছর শেখ হাসিনার পতনের পূর্বক্ষণে ৫ আগস্ট আশুলিয়া পুলিশের গুলিতে নিহতদের লাশ ভ্যানে করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ দিনটিতে নারকীয় হত্যাজ্ঞের ঘটনার স্মরণে ঢাকা জেলা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে পতিত পলাতক পরাজিত বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওঁতপেতে আছে। সরকারের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এই ব্যাপারে আমাদের সবাইকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, থাকা প্রয়োজন।
তারেক রহমান বলেন, সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের মুখাপেক্ষী করা গেলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন করা সম্ভব। একই সঙ্গে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে। দেশের সর্বস্তরের জনগণ কয়েকজন মানুষের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য দেড় দশক ধরে নিশ্চয়ই আন্দোলন অব্যাহত রাখেনি কিংবা জুলাইয়ের অভ্যত্থানেও শহীদ হননি। জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদকে হটিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। সুতরাং সরকারে যখন যারাই থাকুক, কেউ সরকার পরিচালনা করতে চাইলে তাদের অবশ্যই নাগরিকদের কথা শুনতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের আশা-ভাষা বুঝতে হবে। কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হলে তাকে অবশ্যই জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। বিএনপি জনগণের ক্ষমতায়নের এই রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ হটিয়ে জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পণ করেছে। এখন জনগণের মালিকানা জনগণের হাতে দিতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মাঝেমধ্যে যেসব কথা শোনা যায়- তাতে এমন বোঝা যায় যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পক্ষে। কিন্তু এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কি না, জনগণের সামনে এই মুহূর্তে এটি একটি বিরাট প্রশ্ন।
শহীদদের স্মরণে বিশেষ স্থাপনা করা হবে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শহীদরা কিন্তু শুধু একটি সংখ্যা নয়। একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ একটি পরিবারের মৃত্যু, একটি স্বপ্ন-সম্ভাবনার অবসান। তবে আপনাদের সন্তান-স্বজনের শহীদী মৃত্যু দেশ এবং জনগণকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। দেশ আপনার শহীদ সন্তানের কাছে ঋণী। প্রতিটি শহীদ পরিবারের প্রতি রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ যাতে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিজেদের অবদান নিয়ে গর্ব করতে পারে; শ্রমজীবী-কর্মজীবী শহীদ পরিবারের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সদস্যরা যাতে তাদের স্বজনদের শহীদী মৃত্যু নিয়ে গৌরব করতে পারেন; বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, সাভার-আশুলিয়া কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণে পরিকল্পনা করছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪ সালের অভ্যুত্থান পর্যন্ত শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ যেন প্রতিটি আত্মত্যাগকে শহীদী মৃত্যু হিসেবে কবুল করেন- আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। একই সঙ্গে শহীদদের সম্মানার্থে শহীদদের স্বজনদের পরিবারের সদস্যদের তাদের মনের কথা তুলে ধরার জন্য আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজনকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক এতে সভাপতিত্ব করেন।
মন্তব্য করুন