কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যুদ্ধে যেতে বাধ্য রাশিয়ায় পাচার হওয়া ১০ বাংলাদেশি, নিহত ৩

মোহাম্মদ আকরাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আকরাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি কর্মীদের বলা হয়েছিল, রাশিয়ায় চকলেট কারখানা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চি হিসেবে কাজ করে মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতন পাবেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে বাধ্য করা হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে।

এমন চাকরির প্রলোভন দিয়ে রাশিয়ায় পাচার করা হয়েছে ১০ বাংলাদেশিকে। পরে তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে, অথচ যার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। এমনকি যুদ্ধ করার কোনো প্রশিক্ষণও নেই। এই যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারান তিনজন।

ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) মানবপাচার সেলের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাভিত্তিক সংস্থা ড্রিম হোম ট্রাভেল গত দুই বছরে প্রায় ২০ জন বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রথমে তাদের ১০ জনকে উমরাহ ভিসায় পাঠানো হয় সৌদি আরব। উমরাহ পালন শেষে তাদের রাশিয়ায় পাচার করে সুলতান নামে একজনের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সুলতান তাদের তুলে দেন রাশিয়ান সেনাদের কাছে।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, এরপর ওই ১০ জনকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। কেউ সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে, আবার কেউ কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সম্মুখসারিতে লড়তে বাধ্য হন। যুদ্ধ করতে রাজি না হলে তাদের ওপর নেমে এসেছে নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বন্ধ রাখা হয়েছে খাবার দেওয়া।

যুদ্ধে তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তারা।

নিহতদের একজন নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির। ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছেন। তার স্ত্রী ঝুমুর আক্তার বনানী থানায় একটি মামলা করেছেন।

গত ১৪ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের ২৫ বছর বয়সী আকরাম হোসেনের পরিবার জানতে পারে, আকরাম ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। ৯ মাস আগে রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন আকরাম। ওয়েল্ডার হিসেবে কাজ করার জন্য তাকে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল।

আকরামের বাবা মোর্শেদ মিয়া বলেন, ‘আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে দালালদের ৯ লাখ টাকা দিয়ে আকরামকে রাশিয়া পাঠিয়েছিলাম। শুরুতে রাশিয়ায় একটি চীনা কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে ছয় মাস কাজ করে আকরাম। আড়াই মাস আগে কোম্পানিটি তার বেতন দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

যে দালালরা আকরাম ও অন্য বাংলাদেশিদের রাশিয়ায় পাঠিয়েছে, তারা মাস দুয়েক আগে 'চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা' হিসেবে আকরামদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করেন। মাত্র ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে আকরামকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়।

ড্রিম হোম ট্রাভেলসের অংশীদার ফাবিয়া জেরিন তামান্না নেপালে পালানোর সময় গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির আরেক অংশীদার আবুল হোসেন পলাতক। তাদের বনানীর অফিস তিন মাস ধরে বন্ধ।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, আটক ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে ২০ জনকে রাশিয়ায় পাচার করেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। পাচারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাকি ১০ জন সৌদি আরবে আটকে পড়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, তিনজন বাংলাদেশি ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন। তারা অবৈধভাবে প্রবেশ করায় মরদেহ ফেরত আনার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তবে সৌদি আরবে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানের অপর অংশীদার আবুল হোসেন সম্পর্কে তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন রেকর্ড অনুযায়ী তার দেশত্যাগের কোনো তথ্য নেই। তাকে আটক করতে অভিযান চলছে।

সরকারি কর্মশালায় পাচারকারীদের আমন্ত্রণ সম্প্রতি একটি সরকারি কর্মশালায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ড্রিম হোম ট্রাভেলসকে।

গত রোববার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে 'রাশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণ' শীর্ষক কর্মশালায় ড্রিম হোম ট্রাভেলসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

কর্মশালায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো; ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড; আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও); আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদেরও অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী বলেন, 'ড্রিম হোম ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তাদের একজন অংশীদার গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেটা আমি জানি। এটা আমাদের একটা ভুল। ইতোমধ্যে সংশোধন করে নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কর্মশালাটি এখন এক ঘণ্টার হবে এবং শুধু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই অংশ নেবেন।'

পাচারে অভিযুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীর তালিকায় এল, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, 'কর্মশালার আয়োজন করেছে মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ শাখা। সেখানে কীভাবে পাচারকারি হিসেবে অভিযুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের নাম এলো, সেটা খতিয়ে দেখব।'

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের অধীনে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে রাশিয়ায় প্রায় এক হাজার ২০০ কর্মী পাঠিয়েছে। সিআইডি ও মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, সরকারি চ্যানেলে পাঠানো এই কর্মীরা কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হননি।

সূত্র : ডেইলি স্টার

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ বিমানে যে দেশে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ

ঢাকা আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী, অভিবাসনে অগ্রগতির সম্ভাবনা

জো বাইডেনের শরীরে ক্যানসার শনাক্ত, ছড়িয়ে পড়েছে হাড়েও

সকালের মধ্যে ঢাকাসহ কয়েক জেলায় ঝড়ের আশঙ্কা

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ঢাবি উপাচার্যের বিশেষ বৈঠক, এলো যত সিদ্ধান্ত

সীমান্তে রোহিঙ্গা পুশ-ইনের ঘটনায় বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা

বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা : দিল্লি

চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যদের বিক্ষোভ নিয়ে অবস্থান জানাল সেনাবাহিনী

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য আর চলবে না : আল-খামেনি

মানবতাবিরোধী অপরাধের চার্জশিট হলে নির্বাচনে অযোগ্য, জামায়াতের অবস্থান

১০

সাম্য হত্যার প্রতিবাদে চবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

১১

নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক জিসানের মুক্তি দাবি

১২

জমি নিয়ে বিরোধে যুবক খুন

১৩

অবৈধভাবে বাগদা রেনু শিকার, শত কোটি টাকার বাণিজ্য

১৪

শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত যুবলীগ নেতা পেলেন জুলাই যোদ্ধার অনুদান

১৫

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

১৬

এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের অত্যাধুনিক কারখানার উদ্বোধন

১৭

যমুনার তীরে বেওয়ারিশ জাহাজ, চুরির অভিযোগে মামলা

১৮

‘জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করে দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে’

১৯

একটি সম্পর্ক থামাতে গাজায় ৫৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত

২০
X